আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া (১ অক্টোবর ১৯১৮[১] - ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬[২]) বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য শৌখিন পুরাতাত্ত্বিক, গবেষক, প্রাচীন পুঁথি সংগ্রাহক এবং প্রত্নবস্তু সংগঠক।[৩] জন্ম ও পরিবার১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসের প্রথম দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দরিকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া।[৪] তার বাবা এমদাদ আলী মিয়া এবং মা আতিকুন্নেসা বেগম। একসময় তার পূর্বপুরুষেরা জমিদার হলেও হলেও ব্রিটিশ আমলে সূর্যাস্ত আইনে তারা জমিদারি হারিয়ে একসময় কৃষকে পরিণত হয়। তার বাবা এমদাদ আলী ছিলেন আরবি ও ফারসি ভাষার পণ্ডিত এবং পুঁথি সাহিত্যের কর্ণধার।[৫] শিক্ষাজীবন১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে পাশ করেন মেট্রিক, মহসিন বৃত্তি পেয়ে ভর্তি হোন ঢাকা কলেজে। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে আইএ পাশ করেন মেধাতালিকায় দশম হয়ে। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজিতে অনার্স পাশ করেন এবং ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে এমএ সমাপ্ত করেন। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ডিপ্লোমা করে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে আসেন ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে।[৪] ব্যক্তিজীবনজনাব যাকারিয়ার মায়ের ভাষা বাংলা ছাড়াও আরও দখল ছিলো ফার্সি, ফরাসি, উর্দু, ইংরেজি, আরবি ভাষায়। জীবনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও পেয়েছিলেন, কিন্তু তাও ছেড়ে চলে আসেন দেশের টানে।[৪] কর্মজীবনশিক্ষাজীবন শেষ করে ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়টায় তিনি বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের প্রভাষক ছিলেন।[৬] এরপর যোগ দেন সিভিল সার্ভিসে।[৭] ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হোন।[৪] সেই ছাত্রজীবন থেকেই তার কীর্তিময় জীবনের সূত্রপাত। তখন ছিলেন ভালো ফুটবলার। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে পূর্ব পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশনের সম্পাদক (সেক্রেটারি)। সিভিল সার্ভিসের ক্যাডার হিসেবে, ময়মনসিংহের এডিসি থাকাকালীন ময়মনসিংহ শহরের উপকণ্ঠে দেশের প্রথম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বাংলা একাডেমী আর শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠায়ও ছিলো তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। ১৯৮৭ থেকে ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দকালীন সময়ে তিনি সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির, এছাড়া সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদেরও। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রণয়নের উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রথম সারির একজন তিনি, এমনকি ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার জন্য বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক গঠিত প্রথম কমিটিতেও ছিলেন তিনি। নব্য স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমে যুগ্ম সচিব ও পরে পূর্ণ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে। ১৯৭২ থেকে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দকালীন সময়ে ছিলেন বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য। ১৯৭২ থেকে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়ে তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পুরস্কার কমিটিরও সভাপতি ও সদস্য ছিলেন। ছেলেবেলার ফুটবল স্পৃহা আবারও পূর্ণতা পায়, যখন ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দকালীন সময়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দকালীন সময়ে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনে। এছাড়াও তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশ ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার কমিটির সদস্য ও পরে সহসভাপতি ছিলেন।[৪] কীর্তিতিনি তার এই বহুল কর্মময় জীবন পার করে এলেও বাংলার ইতিহাসে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন তার শৌখিন কার্যকলাপের কারণে। এমনকি তার এসব শৌখিন কার্যকলাপ ঐ পেশার পেশাদারী ব্যক্তিত্বের চেয়েও সমৃদ্ধ। তার এসব শৌখিন কার্যকলাপের কারণেই আজ বাংলাদেশের পুরাতত্ত্বের ইতিহাসে সীতাকোট বিহার নামটি যুক্ত হয়েছে। তারই প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম জাদুঘর দিনাজপুর মিউজিয়াম। তারই ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগৃহীত হয়েছে প্রাচীন দুর্লভ অনেক পুথিঁ। এছাড়াও রেখে গেছেন নিজের এক বিপুল সংগ্রহশালা, যেখানে স্থান পেয়েছে অনেক দুর্লভ পুস্তকসহ ছোটোখাটোো প্রত্নসামগ্রী। সীতাকোট বিহার আবিষ্কারজনাব যাকারিয়া ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে বাংলাদেশে ফেরত এসে যোগ দেন দিনাজপুরে যুগ্ম সহকারী কমিশনার (রেভেনিউ) পদে। এ কাজেই তিনি একদিন নবাবগঞ্জ যান। সেখানকার প্রত্যন্ত গ্রাম ফতেপুর মারাজে গিয়ে তিনি অদ্ভুত এক জায়গার দেখা পান। এই জায়গাটিকে ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের তদানিন্তন জেলা প্রশাসক এফ ডব্লিউ স্ট্রং স্থানীয় লোকশ্রুতির উপর ভিত্তি করে জেলা গেজেটিয়ারে 'রামায়ণে উল্লেখিত সীতার দ্বিতীয় বনবাসস্থল হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। ১৮৭৪ সালের দিনাজপুরের প্রশাসক ও পুরাতাত্ত্বিক ওয়েস্টম্যক্ট এই জায়গাটিকে মনে করেছিলেন বাঁধানো পুকুর। কিন্তু তিনি এদেঁর কারো কথাই মানতে পারলেন না। নিজের মতের উপর অটল থেকে বললেন এটা একটা বৌদ্ধবিহার। তার কথায় কেউ কান না দিলেও এর প্রায় নয় বছর পর ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে দিনাজপুরে বদলি হয়ে গেলেন নিজে।সিদ্ধান্ত নিলেন জায়গাটা খুঁড়ে দেখতে হবে। এরূপ পুরাতাত্ত্বিক খননের জন্য যে পরিমাণ অর্থের দরকার হয় তা সংগ্রহের জন্য জেলা বোর্ডকে দশ হাজার টাকা দেবার জন্য রাজি করালেন আর কারিগরি সহায়তার জন্য রাজি করালেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে। প্রয়োজনীয় কর্মীবাহিনীসহ নিকটস্থ ডাকবাংলোতে ক্যাম্প স্থাপিত হলো আর শুরু হলো খননকাজ। খননকাজে বিহারের প্রবেশপথ আর ছাত্রাবাসসহ পুরো কাঠামোটার যে রূপ বেরিয়ে এলো, ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে করা তার আনুমানিক নকশার সাথে তা হুবহু মিলে গেলো। শুধু তাই নয়, অনেকে বিহারটিকে সপ্তম শতকের বলতে চাইলে তিনি তা নাকোচ করে দেন। তার বিশ্বাস ছিলো মাৎসান্যায়ের যুগে এত বড় বিহার কিছুতেই তৈরি হতে পারে না, তাছাড়া পরবর্তিকালের বিহারগুলোর মতো এখানে কোনো কেন্দ্রীয় মন্দির নেই; তিনি ব্যক্তিগত অভিমত দিলেন যে, এটি পঞ্চম বা ষষ্ঠ শতকের বিহার। তার কথাই সত্যি বলে প্রমাণিত হলো।[৪] প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহসীতাকোট বিহারে খনন চলাকালে তিনি ঘুরতে থাকেন প্রাচীন প্রত্নসম্পদের খোঁজে। ঘোড়াঘাট ডাকবাংলোর চৌকিদার নইমউদ্দিন সরকারের সাথে পরিচয় হওয়ার পর বুঝতে পারেন এই ব্যক্তি স্থানীয় প্রাচীন ইতিহাসের একজন বোদ্ধা আর ইতিহাসকেন্দ্রীক অনেক প্রাচীন পুঁথিও তার মুখস্থ। তারই সূত্র ধরে তিনি যান গোবিন্দগঞ্জ থানার চকনেওয়া গ্রামের তৈয়ব আলী সরকারের বাড়িতে। তৈয়ব আলী সরকারের বাবা খয়রুজ্জামান সরকার ছিলেন অনেক প্রাচীন পুঁথির লিপিকার। এখান থেকে তিনি সংগ্রহ করেন অনেক দুষ্প্রাপ্য মূল্যবান পাঁচটি প্রাচীন পুঁথি:
এছাড়াও দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থান, রংপুর, বগুড়া ও চট্টগ্রামের নানা স্থান থেকে সংগ্রহ করেছেন বহু বিখ্যাত বাংলা, সংস্কৃত পুঁথি। যার মধ্যে রয়েছে: 'হালুমীরের পুঁথি, মালাধর বসুর পুঁথি।[৪] দিনাজপুর মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠাসীতাকোট বিহার আবিষ্কারের পর প্রাচীন প্রত্নসম্পদ খোঁজার কাজে পূর্ণ মনোনিবেশ করেন জনাব যাকারিয়া। এজন্য তিনি পুরো উত্তরবঙ্গ চষে বেড়িয়েছেন। ঘুরলেন বৃহত্তম দিনাজপুরের আনাচে-কানাচে, রংপুর-বগুড়ার গ্রাম থেকে গ্রামে। খবর পেলেন নবাবগঞ্জে খ্রিষ্টান মিশনারিদের কুষ্ঠ হাসপাতালে প্রত্যন্ত গ্রামে কুড়িয়ে পাওয়া প্রাচীন একটি মূর্তি রয়েছে। তিনি বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তা নিজ হস্তগত করেন। এভাবেই ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় কয়েক শ অমূল্য আর দুষ্প্রাপ্য প্রত্নসামগ্রী যোগাড় করলেন তিনি। মূর্তি পাচারকারী দল নানা প্রলোভন দেখিয়ে তা হাতিয়ে নেয়ারও চেষ্টা করলো। অনেকেই নানা কৌশলে হস্তগত করতে চাইলেন এই অমূল্য সম্পদ। কিন্তু তিনি মাথা নত না করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। এইসব সংগ্রহকে পুজিঁ করে ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় প্রতিষ্ঠা করেন দিনাজপুর মিউজিয়াম। নিজের সংগৃহীত দুষ্প্রাপ্য মূর্তি, মুদ্রা, শিলালিপিসহ সব প্রত্নসামগ্রী দান করে দিলেন জাদুঘরে। তার প্রচারণায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে বহুজন নিজেদের সংগ্রহে থাকা প্রত্নবস্তু দান করে জাদুঘরটিকে সমৃদ্ধ করলেন। এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হোননি তিনি, সংগ্রহ করা সকল প্রত্নসামগ্রীর বিস্তারিত পরিচিতিসহ একটি তালিকাও প্রস্তুত করেন, যা পরে বই আকারে বের হয়। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে জাদুঘরটিতে প্রায় ৮০০ প্রত্নবস্তু ছিলো। এখন এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম প্রাচীন নিদর্শনের সংগ্রহশালা।[৪] যাকারিয়া সংগ্রহশালাঢাকার কলাবাগান লেক সার্কাসে অবস্থিত তার নিজ বাড়ির দোতলায় তার একান্ত নিজস্ব একটি সংগ্রহশালা রয়েছে, যার নাম যাকারিয়া সংগ্রহশালা। এই ব্যক্তিগত সংগ্রহশালাটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে। বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা দুষ্প্রাপ্য তালপাতার অনেকগুলো পুঁথি আছে যাকারিয়া সংগ্রহশালায়। সারা পৃথিবী চষে খুজেঁ আনা বিভিন্ন গবেষণা নিবন্ধে সমৃদ্ধ বহু পত্রিকাও আছে। আর আছে দুষ্প্রাপ্য বই। অনেক দান-দক্ষিণা আর হারিয়ে যাওয়ার পর এখনও সংগ্রহে আছে বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, আরবি, ফার্সি ভাষার কয়েক হাজার বই। এসব বইয়ের অনেকগুলোরই মাত্র একটি কপি বাংলাদেশে আছে।[৪] লেখালেখিনিজের কর্মময় জীবন ছাড়াও নিজের গবেষণা, আবিষ্কারকে দশের সামনে তুলে ধরেছেন নিজের লেখনীর মাধ্যমে। এছাড়াও নিজের বিভিন্ন ভাষার দখলকে কাজে লাগিয়েছেন মূল্যবান গ্রন্থ অনুবাদে। বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদপুরাতত্ত্ব নিয়ে তার সারা জীবনের গবেষণা বই আকারে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ নামক বইতে। ছয় শতাধিক পৃষ্ঠার বিশাল এই গবেষণাগ্রন্থটির অনেক তথ্য তিনি ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দকালীন সময়ে দিনাজপুর অঞ্চলসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বইটি প্রকাশ করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী। বাংলাদেশে সম্পূর্ণ অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে, প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিহীন কোনো ব্যক্তির এধরনের একখানি তথ্যবহুল ও বিশ্লেষণধর্মী গ্রন্থ লেখার ইতিহাস বিরল। অনেকেই এটিকে বাংলাদেশের পুরাতত্ত্বের বাইবেলও আখ্যা দিয়ে থাকেন। বইটি এতোটাই মৌলিক যে, তা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরাতত্ত্বের পড়াশোনায় পাঠ্যবই হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।[৪] দিনাজপুর জাদুঘর১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে দিনাজপুর জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পর এই জাদুঘরে রক্ষিত সকল প্রত্নসামগ্রীর বিস্তারিত পরিচিতিসহ একটি তালিকা প্রস্তুত করেছিলেন জনাব যাকারিয়া। এই তালিকা বিবৃতি আকারে বেরিয়ে আসে দিনাজপুর জাদুঘর নামের বইতে। বইটি একটি পৃথক গবেষণাগ্রন্থ হিসেবেও খুব সমৃদ্ধ।[৪] অনুবাদএছাড়াও তিনি বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসনির্ভর বিভিন্ন ভাষায় লেখা কিছু দোষ্প্রাপ্য বইও বাংলায় অনুবাদ করেছেন। অনূদিত বইগুলর মধ্যে রয়েছে:
সম্পাদনাতিনি বিভিন্ন গ্রন্থ সম্পাদনার কাজও করেন। সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে আছে:
এছাড়া অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে আর্কিওলজিকাল হেরিটেজ অফ বাংলাদেশ, গ্রাম-বাঙলার হাসির গল্পসহ সাতটি উপন্যাস।[৪] ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ঝিনুক প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় তার প্রশ্নোত্তরে বাংলাদেশের প্রত্নকীর্তি বইটির প্রথম খন্ড।[৯] দিব্যপ্রকাশ থেকে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের প্রাচীন কীর্তি বইটি। প্রথম খণ্ডে হিন্দু ও বৌদ্ধ যুগ আর দ্বিতীয় খণ্ডে মুসলিম যুগের আলোচনা স্থান পেয়েছে। আরো প্রকাশিত হয় নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা বইটি। এছাড়াও দেশী-বিদেশী পত্রিকা-সাময়িকীতে একাধিক ভাষায় ছাপা হয়েছে তার অসংখ্য লেখা। বর্তমানে তিনি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস রচনায় ব্রত।[৪] পুরস্কার ও সম্মাননাজনাব যাকারিয়া ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে গবেষণায় বাংলা একাডেমী পুরস্কারে ভূষিত হোন। তিনি ২০১৫ সনে গবেষণায় একুশে পদক লাভ করেন। মৃত্যুআবুল কালাম মোহাম্মদ জাকারিয়া ২০১৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।[১০] তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে তার গ্রাম দড়িকান্দির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।[১১] আরও দেখুনতথ্যসূত্র
|