গীতগোবিন্দম্
গীতগোবিন্দম্ (দেবনাগরী: गीत गोविन्द) গৌড়ের রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি জয়দেব কর্তৃক সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি কাব্য; এর রচনাকাল ১২ শতক। এই কাব্যে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের গোপিনীদের সঙ্গে রাসলীলা — রাধার বিষাদ বর্ণনা, কৃষ্ণের জন্য ব্যাকুলতা, উপালম্ভ বচন, কৃষ্ণের রাধার জন্য উৎকণ্ঠা, রাধার সখীদের দ্বারা রাধার বিরহ-সন্তাপের বর্ণনা গ্রন্থিত হয়েছে। কাব্যের মনোরম রচনাশৈলী, ভাবপ্রবণতা, সুমধুর রাগরাগিণী, ধর্মীয় তাৎপর্য তথা সুললিত কোমল-কান্ত-পদাবলী সাহিত্যিক রসপিপাসুদের অপার আনন্দ প্রদান করে।[১] ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে উইলিয়াম জোন্স দ্বারা লিখিত 'অন দ্য মিউজিকাল মোডস্ অফ হিন্দুস্' (এশিয়াটিক রিসার্চেস, খণ্ড ৩) বইয়ে গীতগোবিন্দকে 'গোপনাট্য' (Pastoral Drama) বলে অভিহিত করা হয়েছে। অন্যান্য সমালোচকরা একে 'গীতিনাটক', 'পরিশুদ্ধ যাত্রা', 'সংগীত রূপক' বলে আখ্যায়িত করেছেন। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাতে (খণ্ড ৫) এই কাব্যকে 'ধর্মনাট্য'বলা হয়েছে। জার্মান কবি গ্যেটে এই কাব্যের অনুবাদ সংস্করণ পাঠ করে কাব্যটির ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। [২] গীতগোবিন্দম্ ২৪টি প্রবন্ধ (১২ সর্গ) ও ৭২ শ্লোকযুক্ত অষ্টপদী পংক্তির এমন এক সর্বাঙ্গসুন্দর গ্রন্থ যেখানে রাধা-কৃষ্ণের মিলন-বিরহ, অভিলাষ, প্রত্যাশা, নিরাশা, মান, ঈর্ষা, হর্ষোল্লাস তথা পুনর্মিলনের কাহিনি মধুর লালিত্যমণ্ডিত পদ দ্বারা সংবন্ধিত হয়েছে। [৩] এই কাব্যের দশাবতার-স্তোত্রেই প্রথম গৌতম বুদ্ধকে 'যজ্ঞনিন্দাকারী' বিষ্ণুর অবতাররূপে উল্লেখ করা হয়েছে এবং কাব্যের শেষে ভগবানরূপী কৃষ্ণ ভক্ত রাধার শ্রীচরণ নিজের মাথায় রাখার যাচ্ঞা জানিয়েছেন, "দেহি পদপল্লবমুদারম্"। 'নবরসিক' জয়দেব এই কাব্যে শৃঙ্গার রসের মাধুর্যব্যঞ্জক বর্ণযুক্ত বৈদর্ভী রীতির অনুপম শৈলীর প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। কাব্যটি দ্বাদশ সর্গে বিভক্ত। যথা: ১) সমোদদামোদর ২) সক্লেশকেশব ৩) মুগ্ধ মধুসূদন ৪) স্নিগ্ধ মধুসূদন ৫) সাকাংক্ষ পুণ্ডরীকাক্ষ ৬) কুণ্ঠবৈকুণ্ঠ ৭) নাগরনারায়ণ ৮) বিলক্ষলক্ষ্মীপতি ৯) মন্দমুকুন্দ ১০) চতুর চতুর্ভুজ ১১) সানন্দ দামোদর ১২) সুপ্রীতিপীতাম্বর। তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগউইকিমিডিয়া কমন্সে গীতগোবিন্দম্ সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। বাংলা ভাষার উইকিসংকলনে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত মৌলিক রচনা রয়েছে: গীতগোবিন্দ
|