বড়োল্যান্ড
বড়োল্যান্ড (অসমীয়া: বড়োলেণ্ড) বা বড়োল্যান্ড টেরিটরিয়াল রিজন (সংক্ষেপে বিটিআর) হল আসামের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। পাঁচটি জেলা নিয়ে বড়োল্যান্ড সৃষ্টি হয়েছে। সেইগুলি হল যথাক্রমে কোকড়াঝাড় জেলা, বাক্সা জেলা, ওদালগুড়ি জেলা, চিরাং জেলা এবং তামুলপুর জেলা। অঞ্চলটির ক্ষেত্রফল প্রায় ৮,০০০ বর্গ কিলোমিটার। বড়ো আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০০৩ সালে হওয়া বড়ো চুক্তির ফলাফল হিসাবে বড়োল্যান্ড গঠন করা হয়েছিল।[১] ভূগোলবড়োল্যান্ডের সীমারেখা ২৬° ৭' ১২" উত্তর অক্ষরেখা থেকে ২৬° ৪৭' ৫০" উত্তর অক্ষরেখা এবং ৮৯° ৪৭' ৪০" পূর্ব থেকে ৯২° ১৮' ৩০" পূর্ব দ্রাঘিমারেখা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে। এর ৩% ব্যক্তি শহরে বাস করে। বড়োল্যান্ডে ৫০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে মানাস জাতীয় উদ্যান আছে।[২] সেইমতো বড়োল্যান্ড ভৌগোলিকভাবে ভুটান এবং অরুণাচল প্রদেশের সাথে সীমা ভাগাভাগি করে আছে। ভারত-ভুটান আন্তর্জাতিক সীমান্তের একটি বৃহৎ অংশ বড়োল্যান্ডের অধীনে আছে। অন্যান্য সীমান্ত জেলা হল ধুবড়ী জেলা, বঙ্গাইগাঁও জেলা, বড়পেটা জেলা, নলবাড়ী জেলা, কামরূপ জেলা, দরং জেলা এবং শোণিতপুর জেলা।[৩] জনবিন্যাসবড়োল্যান্ডে জনবিন্যাসগতভাবে বড়ো জনগোষ্ঠী সর্বাধিক সংখ্যায় আছে। ২০১১ সালের জনগণনার তথ্য অনুসারে বড়োল্যান্ডের ৩০.৫% লোক বড়ো ভাষী, ২৬.৮% লোক অসমীয়া ভাষী, ২৩.৭% বাংলা ভাষী। অর্থনীতিঅর্থনৈতিকভাবে বড়োল্যান্ড এখন তেমন বেশি উন্নত হয়নি৷ অঞ্চলটি মূলতঃ কৃষিনির্ভর। শিক্ষা২০০৯ সালে কোকরাঝাড় অঞ্চলে বড়োল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হয়েছিল।[৪] সাম্প্রতিককালে বড়োল্যান্ডে সাক্ষরতার হার হয়েছে ৬১.৩%। ক্রীড়াফুটবল এই অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। এটিতে অনেকগুলি ফুটবল ক্লাব রয়েছে যার মধ্যে বারহুংখা এসি, ইউনাইটেড চিরাং দুয়ার এফসি এবং গ্লোবাল এফসি সর্বাধিক পরিচিত কারণ তারা রাজ্যের প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ আসাম রাজ্য প্রিমিয়ার লিগ-এ অংশ নেয়। আরেকটি ক্লাব বড়োল্যান্ড এফসি ডুরান্ড কাপে অংশগ্রহণ করে। বড়োল্যান্ড শহীদ গোল্ড কাপ প্রতি বছর বড়োল্যান্ড শহীদদের স্মরণে আয়োজিত হয়, যারা বড়োল্যান্ড আন্দোলনের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।[৫] এই অঞ্চলটি অনেক জাতীয় স্তরের ক্রীড়াবিদও তৈরি করেছে। এই অঞ্চলে অনুসৃত অন্যান্য খেলাগুলি হ'ল ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, ভলিবল, ক্রিকেট, তায়কোয়ান্ডো, বক্সিং, কাবাডি, দাবা, তীরন্দাজ এবং অন্যান্য দেশীয় খেলা। প্রশাসনসংবিধানের ষষ্ঠ অনুসূচীর অন্তর্গত বড়োল্যান্ডের মুখ্য কার্যালয় কোকরাঝাড় জেলায়। বড়োল্যান্ড ক্ষেত্রীয় পরিষদ (বড়োল্যান্ড টেরিটরিয়াল কাউন্সিল, সংক্ষেপে বিটিসি)-এ এই অঞ্চলটি পরিচালনা করে। প্রথম অবস্থায় বিটিসির সদস্যের সংখ্যা ছিল ৩০ জন। ষষ্ঠ অনুসূচীর ২(১) অনুচ্ছেদটির সংশোধন করে বর্তমান এর সংখ্যা ৪৬ জন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই ৪৬ জনের ভিতর ৩০টি আসন অনুসূচীতে জনজাতির জন্য সংরক্ষিত, ৫টি আসন অজনজাতির জন্য সংরক্ষিত করে রাখা আছে, ৫টি আসন সকলের জন্য মুক্ত এবং ৬টি আসন রাজ্যপাল দ্বারা মনোনীত। অর্থাৎ বিটিসির মোট সদস্য সংখ্যার ভিতর ৪০ জন নির্বাচিত এবং ৬ জন মনোনীত।[৩] প্রতি পাঁচ বছরে অন্তত ১টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আসাম সরকারের জ্ঞাপন নং TAD/BTC/161/2003/6-র অধীনে বিটিসির হাতে ৪০ টা বিষয়ে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। কৃষি, পশুপালন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, মীন পালন, বন এবং পরিবেশ, জন্ম-মৃত্যুর পঞ্জীয়ন ইত্যাদি কতগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয় বিটিসির ক্ষমতার ভিতর অন্তর্ভুক্ত হয়ে আছে।[৩] প্রশাসনীয় বিভাগবড়োল্যান্ড চারটি জেলা নিয়ে গঠিত।[৬] ১০ টা মহকুমা এবং ৪০ টা উন্নয়নখণ্ড আছে।[৭]
তথ্যসূত্র
|