বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, যা সাধারণত বিমান নামে পরিচিত, বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি এবং জাতীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ পরিচালনা সংস্থা যা 'বিমান পরিবহন সংস্থা' নামে পরিচিত।[৭] এটি প্রধানত ঢাকায় অবস্থিত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়াও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক রুটের পাশপাশি অভ্যন্তরীণ রুটেও যাত্রী এবং মালামাল পরিবহন করে। বিশ্বের প্রায় ৭০ টি দেশের সাথে বিমানের বিমান সেবা চুক্তি রয়েছে[৮] এবং বর্তমানে ১৬টি দেশে এর কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিমানের প্রধান কার্যালয়ের নাম বলাকা ভবন, যেটি ঢাকার উত্তরাঞ্চলে কুর্মিটোলায় অবস্থিত। বিমান বাংলাদেশের যাত্রীদের অধিকাংশই হজ্জযাত্রী, পর্যটক, অভিবাসী এবং প্রবাসী বাংলাদেশি এবং সহায়ক সংস্থাগুলির ক্রিয়াকলাপসমূহ বিমান পরিবহন সংস্থার কর্পোরেট ব্যবসায়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ গঠন করে।[৯]:১১ ব্যাপক সংখ্যক বিদেশী পর্যটক, দেশীয় পর্যটক এবং প্রবাসী বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের সেবা প্রদানের জন্য দেশের পরিবহন খাতে 8% বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হারের অভিজ্ঞতা অর্জনকারী বাংলাদেশ বিমানের সাথে অন্যান্য বাংলাদেশি বেসরকারী বিমান সংস্থাগুলির প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১৯৯৬ পর্যন্ত দেশে উড়োজাহাজ খাতের একক সংস্থা হিসেবে ব্যবসা চালায়।[১০] বিভিন্ন সময়ে উড়োজাহাজ বহর ও গন্তব্য বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও দুর্নীতি আর অদক্ষতার জন্য বিমান বার বার পিছিয়ে পড়ে। বাংলাদেশ বিমান তার সুসময়ে সর্বোচ্চ ২৯টি গন্তব্যে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত যা পশ্চিমে নিউ ইয়র্ক শহর থেকে পূর্বে টোকিও পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত বিমান পুরোপুরি একটি সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ছিল যেটি সে বছরের জুলাই মাসের ২৯ তারিখ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রুপান্তরিত হয়। কোম্পানিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা কমিয়ে আনার পাশাপাশি এর উড়োজাহাজ বহর আধুনিকায়নের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়। ২০০৮ সালে বিমান সংস্থাটি বোয়িং কোম্পানির সাথে দশটি বিকল্পের পাশাপাশি নতুন দশটি বিমানের জন্য চুক্তি করে।[১১] নতুন উড়োজাহাজ হাতে পাওয়ার পর বিমান তার গন্তব্যের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ফ্লাইট চলাকালীন ইন্টারনেট/ওয়াই-ফাই, মোবাইল যোগাযোগ এবং টেলিভিশন দেখার সুবিধার মতো যাত্রীসুবিধাদি উন্নত করেছে।[১২][১৩] ইউরোপিয়ান এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি নিরাপদ সংস্থা হিসেবে বিমান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে।[১৪][১৫] এছাড়াও আইএটিএ-এর নিরাপত্তা নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।[১৬][১৭][১৮] এরপর বিমান, এশিয়া এবং ইউরোপে তাদের পূর্ববর্তী কয়েকটি গন্তব্যে পুনরায় ফ্লাইট চালু করে।[১৯][২০] সাম্প্রতিক সময়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের নতুন পরিচালনা দলের অধীনে সময়োপযোগের পাশাপাশি অন-টাইম ফ্লাইটের কর্মক্ষমতায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি করে।[২১] ইতিহাসরাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ নং ১২৬ অনুসারে ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স গঠিত হয়।[২২][২৩] এদিন বাংলাদেশ বিমানবাহিনী থেকে একটি ডিসি-৩ বিমান নিয়ে জাতির বাহন হিসেবে বাংলাদেশ বিমান যাত্রা শুরু করে।[২৪] সাবেক পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ২৫০০ কর্মচারী ও কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা এবং ১০ জন বোয়িং ৭০৭ কমান্ডার ও ৭ জন অন্যান্য পাইলটের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠানটি গঠিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকারের কাছে সংস্থাটি একটি প্রস্তাব জানায়।[২৫]:৬ প্রাথমিকভাবে এর নাম ছিল এয়ার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল।[২৬] ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আভ্যন্তরীণ সেবার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে বিমান। ভারত থেকে নিয়ে আসা ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-৩ ছিল প্রথম সংযোজন, যেটি ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম, যশোর এবং সিলেটের যোগাযোগ স্থাপন করেছিল।[২৭] এই ডিসি-৩ বিমানটি ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের সময় দুর্ঘটনার পরে।[২৮] এই দুর্ঘটনার পর ভারত সরকার বাংলাদেশকে আরও দুই ফকার এফ২৭ উপহার দেয়।[২৭] অল্প সময়ের ব্যাবধানে বাংলাদেশ বিমানের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব চার্চ কাউন্সিলের কাছ থেকে লোন নিয়ে ডগলাস ডিসি-৬ সংযোযন করা হয়।[২৭] পরবরতিতে ডগলাস ডিসি-৬ এর পরিবর্তে ডগলাস ডিসি-৬বি নিয়ে আসা হয়, যা ট্রল-এয়ারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া হয়েছিল, যেটি ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচল করত।[২৯] ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ বিমান বাংলাদেশ, ব্রিটিশ কালেডোনিয়ানের থেকে পাওয়া একটি বোয়িং ৭০৭ চার্টার্ড প্লেন নিয়ে ঢাকা-লন্ডন রুটে প্রথম সাপ্তাহিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে।[৩০] ঢাকা-কোলকাতা রুটে নিয়মিত সেবা প্রদানের জন্য ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ ভারত থেকে একটি ফকার এফ-২৭ আনা হয়।[২৫]:৭ ওই বছর বিমান প্রায় ১,০৭৮ টি ফ্লাইটে ৩,৮০,০০০ জন যাত্রী পরিবহন করে[২৫]:৮ এবং সে বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন ৩টি ফকার এফ-২৭ যোগ করে।[২৫]:৬ ১৯৭৩ সালে ঢাকা-কোলকাতা রুটে নিয়মিত ২টি ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য আরও ৪টি ফকার এফ-২৭ আনা হয়।[২৫]:৭ একই সময় একটি বোয়িং ৭০৭ সংযুক্ত হলে বিমান ঢাকা-লন্ডন সপ্তাহে ২টি ফ্লাইট চালু করে। সে বছরেই বিমান চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে সেবা প্রদান শুরু করে।[২৫]:৭ ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি, কাঠমান্ডু, নভেম্বরে ব্যাংকক এবং ডিসেম্বরে দুবাই রুটে বিমানের পরিসেবা চালু হয়।[২৫]:৭ ১৯৭৬ বিমান তাদের দুইটি ফকার এফ-২৭ বিক্রি করে একটি বোয়িং ক্রয় করে আবুধাবি, করাচি ও বম্বে (বর্তমান মুম্বই) রুটে সেবা চালু করে।[২৫]:৭ ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরও একটি বোয়িং কিনে সিঙ্গাপুরে বিমানের পরিসেবা বিস্তৃত করা হয়। পরের বছর বিমান তার ৪র্থ বোয়িং ক্রয়ের মাধ্যমে জেদ্দা, দোহা ও আমস্টারডাম রুটে বিমান সেবা চালু করে।[২৫]:৭ সে বছরেই বিমান পাবলিক সেক্টোর কোম্পানিতে রুপান্তরিত হয় এবং পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত হয়।[২৫]:৭ ১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরে বিমান ব্রেক ইভেন পয়েন্ট স্পর্শ করে এবং পরের বছর লাভের মুখ দেখে।[২৫]:৮ ১৯৭৯ সালে কুয়ালালামপুর, এথেন্স, মাসকট ও ত্রিপলির রুট চালু করে বিমান।[২৫]:৭ ১৯৮০ সালে বিমানের ইয়াং, টোকিও এবং ধাবাওং রুট চালু হয়।[২৫]:৭ বিমান ১৯৮১ সালে তাদের প্রথম ৮৫-সিটার ফকার এফ২৮-৪০০০ ক্রয় করে।[৩১] একটি বোয়িং ৭০৭-৩২০সি ১৯৮১ সালে ঢাকা টু হিথ্রো রুটে সংযোজন করা হয়। ১৯৮৩ সালে আরও ৩টি ডগলাস ডিসি-১০ সংযুক্ত হয় এবং বিমান সংস্থাটি তাদের বোয়িং ৭০৭-এর দশকে প্রবেশ করে।[২৫]:৭[৩২] এছাড়াও বিমান ১৯৮৩ সালে বাগদাদ, ১৯৮৪ সালে প্যারিস এবং ১৯৮৬ সালে বাহরাইনে তাদের সেবা শুরু করে।[২৫]:৭ ৫ অগাস্ট ১৯৮৪ তে বিমানের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ দূর্ঘটনা ঘটে, একটি ফকার বিমান চট্টগ্রাম থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে দূর্ঘটনায় পরে, যাতে প্রায় ৪৯ জন যাত্রী মারা যায়।[৩৩] নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি, লম্ভা দূরত্বর ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ১৯৯৬ সালে বিমান দুইটি দূরপাল্লার এয়ারবাস এ৩১০ ক্রয় করে। ২০০০ সালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স আর এয়ার জ্যামাইকা থেকে ভাড়ায় আনা দুইটি এয়ারবাস এ৩১০ সংযোজন করা হয়। এছাড়া ২০০৩ সালে আরও একটি ভাড়ায় আনা এয়ারবাস এ৩১০ বহরে যুক্ত হয়।[২৫]:৭ ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে বিমান ১১,৫০,০০০ জন যাত্রী পরিবহন করে, যা বিগত দশকের তুলনায় দুইগুন আর ৭০ ভাগ বেশি। প্রাইভেট সার্ভিস চালু হলে বিমান ৩৫ ভাগ বাজার হারায় এবং গড়ে বছরে ১,৬২,০০০ জন অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন করে। একই সময় বিমান ইতিহাসে সর্ববৃহৎ লোকসানের মুখ দেখে, যার পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। পরের বছর লোকসান হয় প্রায় ৬ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। সে সময় বিমান তার জ্বালানী সরবরাহকারী, বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশনকে এক মিলিয়ন ডলারের তেলের বিলও পরিশোধ করতে পারেনি।[৩৪] ২০০৭ সালে ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি ১০-৩০ ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে অবতরন করে। প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়পরিচালনা পর্ষদবিমান পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন।[৩৫][৩৬] এর পূর্বে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান।[৩৭] বিমানের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারের অতিরিক্ত সচিব শফিউল আজিম।[৩৮] এর পূর্বে বিমানের ইতিহাসে প্রথম বিদেশী নাগরিক[৩৯][৪০] কেভিন জন স্টিল,[৪১] ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন।[৪২][৪৩] প্রতিযোগিতামূলক বাছাই প্রক্রিয়া শেষে দেশি-বিদেশি ৪২ জন প্রার্থীর একটি পুল থেকে তাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।[৪০] স্টিল ছিলেন একজন ব্রিটিশ নাগরিক, যিনি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং বিশ্বের অন্যান্য এয়ারলাইন্সে পরিচালনা ও প্রশাসনিক পদে কাজ করার বহু বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন।[৪৪][৪৫] বিমানে যোগদানের পর একটি সংবাদ সম্মেলনে স্টিল বিমানকে একুশ শতকের আধুনিক ও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রতিজ্ঞা ব্যাক্ত করেছিলেন।[৪৬] যদিও নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে প্রায় এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর বিভিন্ন মাধ্যমে তার সাফল্য নিয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল। স্টিল স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার কথা উল্লেখ করে ডিসেম্বর ২০১৩ সালে বিমানের দ্বায়িত্বপদ থেকে পদত্যাগ করেন।[৪৭] ১৯ এপ্রিল ২০১৪ স্টিলে বিমানের কর্মস্থল ত্যাগ করেছিলেন।[৪৮] ৫ জানুয়ারি ২০১৫ সালে কাইল হেইউড বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ গ্রহণ করেন। একজন ব্রিটিশ নাগরিক হেইউড ছিলেন কেভিন স্টিলের পরে এয়ারলাইন্সের পদে অধিষ্ঠিত দ্বিতীয় বিদেশী নাগরিক।[৪৯] এছাড়াও বিমানের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হিসেবে যাদের নিযুক্ত করা হয়েছিল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের মূখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সহকারী প্রধান (অপারেশন অ্যান্ড ট্রেনিং), বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) এম খুরশিদ আলম, বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিবুল আলম, ইমার্জিং রিসোর্সেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুর ই খোদা আব্দুল মবিন ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও (পদাধিকারবলে)। মালিকানাবিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সূচনালগ্ন থেকেই এর মালিকানা ছিল বাংলাদেশ সরকারের আওতাধীন। ১৯৭৭ সালে বিমানকে একটি পাবলিক সেক্টর করপোরেশনে পরিনত করা হয় যা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত পরিচালিত পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে বিমানের সীমাবদ্ধ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ছিল এবং বিমানের পরিচালক ও কর্মকর্তাদের কিছুটা স্বাধীনতা প্রদান করেছিল।[২৫]:৭ ১৯৮৭ সাল বিমানের পরিশোধিত মূলধন আরও দুই হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়।[৫০] এবং সর্বশেষে ২০০৭ সালে যখন বিমানকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিনত করা হয় তখন এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিনত হয়।[৫১] বেসরকারিকরণ১৯৮০-এর দশকআশির দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বিমানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শুরুর দিকে কিছু উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ঘটলেও অদক্ষ্য ব্যবস্থাপনা ও দূর্নিতীর কারণে ধীরে ধীরে বিমানের লাভ কমতে শুরু করে। তৎকালীন দূর্নিতীগুলোর মধ্যে ছিল লোক দেখানো জিনিসপত্র ক্রয়, ভুয়া মেরামত বিল, রাজনৈতিক কারণে অলাভজনক রুটে বিমান চালনা ইত্যাদি।[৫২][৫৩] ১৯৯০-এর দশকবেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে বিমান বাংলাদেশের কাছে সরকারের বকেয়া কর ছিল প্রায় ২ কোটি ২০ লাক্ষ টাকা। পূর্বে ১৯৯৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায় যে শুধুমাত্র দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিমানে ৫,২৫৩ জন কর্মকর্তা ছিল যেখানে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স প্রায় সমান সংখ্যক দাফতরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে বিমান বাংলাদেশের চেয়ে দশগুন বেশি বিমান পরিচালনা করতে সক্ষম ছিল। এই গবেষণাই প্রমাণ করেছিল যে তৎকালীন বিমান মূলধন স্বল্পতায় ভূগছিল এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল।[৫৪] ১৯৯৯ সালে, বিমান বাংলাদেশের উপর পরিচালিত এক নিরীক্ষা থেকে জানা যায় যে বিমানের টিকিট বিক্রয় প্রতিনিধিদের (সেলস এজেন্ট) কাছে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা রকেয়া আছে যা বিমানেরই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে সম্ভব হয়েছিল।[৫৫] উপরন্তু এই টিকিট বিক্রয় প্রতিনিধিদেরকে অতিরিক্ত ২৪ লক্ষ টাকা কমিশন হিসেবে অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল যা বিমান বাংলাদেশের নিয়ম বহির্ভূত। ২০০৭ সালে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দূর্নিতী প্রতিরোধের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি দূর্নিতীর অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাই বাংলাদেশ বিমানের সাবেক ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার শামীম ইস্কান্দারকে গ্রেফতার করে।[৫৬][৫৭] শামীম ইস্কান্দারের গ্রেফতারের আগে তার সহযোগী আরও প্রায় পয়ত্রিশ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।[৫৮] ১৯৯০ সালের পর থেকে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতীক ক্ষতির কারণে[৫৯][৬০] বাংলাদেশ সরকার বিমান বাংলাদেশকে বেসরকারীকরনের সিন্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার ২০০৪ সালে বিভিন্ন বিদেশি বিনিয়োগকারীর কাছে বিমানের চল্লিশ শতাংশ শেয়ার বিক্রয়ের করার প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাবে উল্লেখ ছিল যে বাংলাদেশ সরকার বিমানের কিছু নিয়ন্ত্রণ সরকার সংরক্ষণ করতে চায়। এই প্রস্তাব বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয় না উপরন্তু প্রস্তাবটি তৈরী এবং নিরীক্ষণ করার পেছনে বেসরকারী তদারকি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করায় সরকারের ১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়।[৬১] ২০০০-এর দশক২০০৫–০৬ অর্থবছরে বিমান প্রায় সাড়ে ১১ কোটি যাত্রী পরিবহ বহন করেছিল, যা আগের দশকের তুলনায় ৭০% বৃদ্ধি পেয়েছিল। বাংলাদেশে বেসরকারী অভ্যন্তরীণ ক্যারিয়ার চালুর সাথে সাথে, গত দশ বছরের গড়ের তুলনায় বিমানের বাজারের শেয়ারের পরিমাণ ৩৫% হ্রাস পেয়েছে। ২০০৫–০৬ অর্থবছরে কেবল ১৬২,০০০ যাত্রী অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানে ভ্রমণ করেছিলেন। একই সময়কালে বিমানটি তার বৃহত্তম বার্ষিক ক্ষতির মুখে পর, যা প্রায় ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০১০ সালের হিসাবে ৮.৩ বিলিয়ন টাকা), পরের বছরে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০১০ সালের হিসাবে ৬৯9 বিলিয়ন টাকা) লোকসান হয়েছে।[৬২] বিমানের জ্বালানী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের কাছে প্রায় দশ লক্ষ টাকা বকেয়া হয়,[৬৩] যা ডিসেম্বর ২০০৬ সালে শেষের দিকে বেড়ে ১৫.৬৪ বিলিয়ন ডলারে পৌছায়।[৬৪] পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি২০০৭ সালের মে মাসে বাংলাদেশের তত্বাবধায়ক সরকার বিমানকে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিনত করার পরিকল্পনা মঞ্জুর করে যার শেয়ারের মালিকানা সাতটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।[৬৫] এরই পরিপ্রেক্ষিতে মানব সম্পদ ও যন্ত্রপাতির অনুপাত কমিয়ে আনার জন্য সরকার বিমানের কর্মকর্তাদের জন্য একটি স্বেচ্ছা অবসরের রুপরেখা প্রনণয়ন করে। তৎকালীন বিমান বাংলাদেশে বিমান এবং মানব সম্পদের অনুপাত ছিল ৩৬৭:১।[৬৬] কিন্তু একই শিল্পে অন্যান্ন এশিয়ান সংস্থাগুলো ১৫০:১ অনুপাত বজায় রেখেছিল।[৬৬] চাকুরীর মেয়াদ অনুযায়ী স্বেচ্ছা অবসরের পাওনাদি ঘোষিত হয়েছিল এবং বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া ২.৯৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয়ের জন্য পরিষেবার দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।[৬৬] এই পরিকল্পনা থেকে বিমান প্রায় ১৬০০ কর্মী কমিয়ে আনার পরীকল্পনা করেছিল, কিন্তু ২১৬২ জন কর্মী স্বেচ্ছা অবসরের জন্য আবেদন করে। এদের মধ্যে ১৮৬৩[৬৭][৬৮][৬৯] থেকে ১৮৭৭ জনের আবেদন[৭০] বিমান ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করে।[৬৬] ২৩ জুলাই ২০০৭ সালে[৭১] বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়।[৫১] প্রথমে এটির নাম পূর্বের বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স রাখার সুপারিশ করা হলেও পরে তা বাতিল করা হয়।[৭২] সরকার এর পূরো পনেরো লক্ষ শেয়ারেরই মালিক যদিও সরকার ৪৯% শেয়ার ব্যক্তিগত খাতের মালিকানায় দিয়ে বাকি ৫১% শেয়ার সরকারি মালিকানায় রেখে এর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চেয়েছিল।[৭৩][৭৪] পূনর্গঠনের পর এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মোনেমকে পুনরায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বাকী ছয়জন পরিচালককে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিমানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন। এই ছয় মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুজ্ঞ সচিবকে সমানভাবে বিমানের শেয়ারের মালিকানা দেওয়া হয়।[৭৩] সরকার ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এয়ার কমোডর জাহেদ কুদ্দুস কে আব্দুল মোনেমের স্থলাভিষিক্ত করে।[৭৫] এ আগে ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এয়ার কমোডর জাহেদ কুদ্দুস বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পূর্বে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিভিন্ন উচ্চপদস্থ পদে কর্মরত ছিলেন।[৭৬] পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রুপান্তরীত করার আগে যেসকল কর্মী স্বেচ্ছা অবসর পরীকল্পনায় চকুরি ছেড়েছিলেন তারা সমন্বিতভাবে একটি প্রতিযোগী এয়ারলাইন্স গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন।[৭৭] যার জন্য এয়ার বাংলা ইন্টারন্যাশনাল, বিমান ইমপ্লইজ এয়ারলাইন ও বলাকা নামগুলি প্রস্তাব করা হয়েছিল।[৭৮] বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট এসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিইডেন্ট তাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন।[৭৭] কিন্তু পরবর্তীতে এই বিষয়ে আর কিছু জানা যায় নি। বিমান সংস্থা ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৬০০ কোটি টাকা এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে, ক্যারিয়ারের ৮০০ মিলিয়ন ডলার লোকসান হয়েছিল।[৭৯] ২০১০-এর দশক২০১০-১১ অর্থবছরে যথাক্রমে বিপিসি ১১.৯৪ বিলিয়ন এবং সিএএবির ৫.৭৩ মিলিয়ন ডলার ছাড়ের[৮০] পরেও বিমান ২ বিলিয়ন টাকা ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হয়।[৭৯] পরবর্তী ২০১১-১২ অর্থবছরে বিমান ৬.০৬ বিলিয়ন (মার্কিন$৭৫ মিলিয়ন) ডলার লোকসান করে;[৭৯] এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে নিরীক্ষাবিহীন পরিসংখ্যানে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি দেখানো হয়।[৮১] ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে, বিভিন্ন উৎসের ব্যয় বাবদ বিমানের ১৫.৬০ বিলিয়ন ডলার অপরিশোধিত ছিল;[৮১] যার মধ্যে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিকট ৩৬৭৬.২ মিলিয়ন ডলার[৮২] এবং জ্বালানী সরবরাহকারী পদ্মা অয়েল কোম্পানির নিকট ৮.৫০ বিলিয়ন ডলার বকেয়া ছিল।[৮১] বিমান ২০১৪–১৫ অর্থবছরে ৩.২৪ বিলিয়ন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২.৭৬ বিলিয়ন এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১.৫১ বিলিয়ন ডলার লাভ করেছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বিমানের সর্বমোট লাভ হয়েছিল ৪৭০ মিলিয়ন ডলার।[৮৩] ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিমানের অপারেটিং আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৯৩১ কোটি টাকা কিন্তু ব্যয় হয়েছিল ৫১৩৩ কোটি টাকা, এতে -২০২ কোটি টাকা লোকসান হয়।[৪] তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিমানের ৩১৭৫ কোটি টাকা আয় করে যেখানে ব্যয় ছিল ২৯৩৮ কোটি টাকা এবং বিমানের সর্বমোট মুনাফা দাঁড়ায় ২৩৭ কোটি টাকা।[৪] অধীনস্থ কোম্পানিবিমানের সহায়ক সংস্থা বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং, বিমান চলাচল প্রকৌশল, বিমান প্রশিক্ষণ এবং ফ্লাইট ক্যাটারিংয়ের সাথে সম্পর্কিত।[৮৪] বিমানের পাঁচটি সম্পূর্ণ মালিকানাধীন সহায়ক সংস্থা রয়েছে:
১৯৭২ সাল থেকে, বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সংস্থাটি বাংলাদেশের সকল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিসেবা প্রদার করছে।[৮৫][৮৬] সংস্থাটি ২০১১-১২ অর্থবছরের ৪.৫ বিলিয়ন ডলার মুনাফা আয় করেছিল।[৮৫] উড্ডয়নকালীন সময়ে বিমানে খাবার সরবরাহের জন্য ১৯৮৯ সালে সম্পূর্ণ মালিকানাধীন সহায়ক সংস্থা বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[৮৭] এটি সৌদি, ইতিহাদ, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, থাই এয়ারওয়েজ, এমিরেট্স, ড্রাগন এয়ার, চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজ সহ বাংলাদেশের অন্যান্য বিমান প্রতিষ্ঠানগুলিকে নৈমিত্তিক খাবার সরবরাহ করে[৮৪] এটি বিমানের অন্যতম লাভজনক খাত।[৮৭] বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের সুবিধার্থে ১৯৭৬ সালে বিমানের আরেকটি লাভজনক সহায়ক সংস্থা বিমান পোল্ট্রি কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়, যেটি ১৯৮০ সালের নভেম্বরে কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এখানকার ৯০% ডিম ও মুরগি বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের পাঠানো হয়।[৮৪][৮৭] ২০০৭ সালের মার্চে এই খামারে বার্ড ফ্লু ধরা পড়েছিল এবং এতে অনেক মুরগি মারা হয়েছিল।[৮৮][৮৯] এটি ছিল বাংলাদেশে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের প্রথম ঘটনা।[৯০] সেবা২০১৩ সালে, বিমান এয়ারলাইন্সে অবকাঠামোগত সহায়তা এবং উপার্জন সম্পর্কিত অ্যাকাউন্টিং পরিষেবা সরবরাহ করার জন্য সিআইটিএ[৯১] এবং মার্কেটরের[৯২] সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০১৪ সাল থেকে বিমানের ওয়েবসাইটে অগ্রিম আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু হয়। এছাড়াও অনলাইনে খাবার নির্বাচনের বিকল্পও সরবরাহ করা হয়, যেখানে যাত্রীরা ডায়াবেটিক খাবার, নিরামিষ খাবার, এশিয় নিরামিষ খাবার, শিশুদের খাবার এবং মুসলিম খাবার থেকে পছন্দ মতো খাবার বেছে নিতে পারে, যা তাদেরকে উড্ডয়নকালে বিমানে পরিবেশন করা হবে।[৯৩] তৃতীয় পক্ষের পরিষেবা সরবরাহকারীর সাথে সহযোগিতামূলক ভাবে বিমান যাত্রীরা ইকোনমি (সাশ্রয়ী) শ্রেণি বুকিংয়ের পরে অতিরিক্ত আসন থাকা সাপেক্ষে বিজনেস শ্রেণির আসনের সুবিধা নিতে পারে।[৯৪] ফ্লাইট শ্রেণীসাধারনত বড় এবং সুপরিসর বিমানগুলোতে দুই ধরনের ভ্রমণ শ্রেণী বিজনেস ক্লাস ও ইকোনমি ক্লাস রয়েছে, কিন্তু ছোট এবং স্বল্পপরিসর বিমানগুলোতে শুধুমাত্র ইকোনমি ক্লাস সেবা প্রদান করা হয়। বিমানের বেশিরভাগ বিমানগুলিতে একটি দ্বি-শ্রেণীর পরিসেবায় (জে এবং ওয়াই) পরিচালিত হয়। বিমানের বোয়িং ৭৭৭ বিজনেস ক্লাসের কেবিনের আসনব্যবস্থা ২-৩-২ বিন্যাসে সাজানো হয়েছে, অন্যদিকে ইকোনমি ক্লাসের কেবিন ৩-৩-৩ বিন্যাসে সাজানো। সংকীর্ণ বডির বোয়িং ৭৩৭-৮০০-এর বিজনেস ক্লাস ২-২ বিন্যাসে সাজানো হয়েছে, অন্যদিকে ইকোনমি ক্লাসের কেবিন ৩-৩ বিন্যাসে সাজানো। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বিমানবন্দর এবং হোটেল লাউঞ্জে প্রবেশাধিকার রয়েছে।[৯৫] এয়ারবাস এ৩১০ ঘরানার বিমানগুলোতে মসলিন এক্সিকিউটিভ শ্রেনীর আসন ২-৩-২ বিন্যাসে সাজানো, অপরদিকে ম্যাকডনাল ডগলাস ডিসি ১০-৩০ বিমানগুলোতে যাত্রীদের আরও বেশি জায়গা দিয়ে ২-২-২ বিন্যাসে সাজানো। অন্যান্য ইকোনমি ক্লাসে সচরাচর আসনগুলো ২-৫-২ বিন্যাসে সাজানো থাকে। ফ্লাইটের আভ্যন্তরীণ সুবিধাবিমান তাদের ফ্লাইটের অভ্যন্তরে সরবরাহকৃত ম্যাগাজিনটি ২০১৩ সালে সেপ্টেম্বর বিহঙ্গ নামে সাবকন্টিনেন্টাল মিডিয়া গ্রুপ থেকে পুনরায় প্রকাশ করছে। দ্বি-মাসিক ম্যাগাজিনটি পূর্বে দিগন্ত নামে পরিচিত ছিল এবং তারও আগে এটি যাত্রী নামে প্রকাশিত হত। ম্যাগাজিনটি বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় প্রকাশিত হয়, যেটি মুলত বাংলাদেশ ও বিমানের গন্তব্য বিষয়ক তথ্যাদি সরবরাহ করে।[৯৬] বিমানে বিজনেস ক্লাসে বাংলা ও ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্র সরবরাহ করা হয়। বিমান ২০১৪ সালের মার্চে, বিমান বুটিক নামে ইন-ফ্লাইট শুল্ক-মুক্ত বিক্রয়প্রদর্শণী চালু করে।[৯৭] শুল্ক-মুক্ত পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে আতর, প্রসাধনী, অলঙ্কার, ঘড়ি, শিশুদের উপহার, চকোলেট, তামাক ইত্যাদি।[৯৮] ২০১৪ সালে বিমান অন-বোর্ডে বাচ্চাদের জন্য রঙিন বই, স্টেশনারি, পুতুল এবং জিগস পাজলের ব্যবস্থা চালু করে।[৯৩] বিমান সাধারণত তাদের ইকোনমিক ক্লাসের ফ্লাইটে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় সরবরাহ করে না, তবে বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন লাউঞ্জে প্রবেশাধিকার দেয়া হয়।[৯৫][৯৯] ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-১০-৩০ বিমানগুলির প্রত্যেকটি কেবিনে প্রজেক্টরের সাহায্যে প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে, অপরদিকে এয়ারবাস এ৩১০ বিমানে ছাদের লাগেজ রেকে ঝুলন্ত মনিটরের ব্যবস্থা আছে। তবে আধুনিক বোয়িং ৭৭৭ এবং বোয়িং ৭৮৭ বিমানগুলোতে যাত্রীদের ইন-ফ্লাইট বিনোদনের সুবিধার্থে ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য প্রতিটি আসনের পেছনে এলসিডি মনিটর যুক্ত রয়েছে। প্রতিটি আসনে একটি করে ব্যক্তিগত টাচ স্ক্রিন প্রদর্শন যুক্ত থাকে। পুরাতন বিমানগুলোর ক্ষেত্রে উৎপাদনের সময় এগুলোতে যে ধরনের সুযোগ সুবিধা ছিলো বাংলাদেশ বিমান সেগুলোই অব্যাহত রয়েছে।[১০০][১০১] এছাড়াও এই প্রদর্শনটিতে উচ্চ রেজোলিউশনে বিমানের চলমান মানচিত্র এবং সরাসরি ফ্লাইটের তথ্য জানানো হয়। এগুলি ইংরেজি এবং বাংলা দুটি ভাষায় উপলভ্য।[১০২] ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিমানের বহরে সদ্য যুক্ত হওয়া বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তার বহরে বেশিরভাগ নতুন বিমানগুলিতে ইন্টারনেট, ওয়াইফাই, মোবাইল টেলিফোনি, মুভি স্ট্রিমিং এবং লাইভ টিভি স্ট্রিমিং সেবা চালু করেছে।[১২] এই সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে পঁচিশটি উপগ্রহ স্থাপন করা হয়েছিল। প্যানাসোনিক এভিওনিক্সের টাচ স্ক্রিন সহ নতুন প্যানাসোনিক ইএক্সথ্রি সিট-ব্যাক মনিটরগুলি যাত্রীদের এক শতাধিক অন-ডিমান্ড চলচ্চিত্র, সঙ্গীত এবং ভিডিও গেম সরবরাহ করে। অন-বোর্ড টাচ স্ক্রিন থ্রিডি রুট-ম্যাপ, বিমানের সর্বশেষতম সংযোজন। যেখানে বিমান উড্ডয়নকালীন সময়ে অতিক্রমকারী অঞ্চলগুলির বিভিন্ন কাঠামো প্রদর্শন করা হয়।[১৩] ২০১৭ সালের মার্চ থেকে বিমান তাদের ফ্লাইটগুলিতে ডায়াবেটিস এবং শিশুদের খাবারের প্যাকেজ সহ নতুন-বৈচিত্র্যযুক্ত খাবার এবং পানীয় বিকল্প সরবরাহ করতে শুরু করেছে, যা প্রতি তিন মাস অন্তর পর্যালোচনার মাধ্যমে হালনাগাদ করা হয়।[১০৩] অন-বোর্ডে বিমানের ফ্লাইটে হালাল খাবার পরিবেশন করা হয় এবং বিজনেস ক্লাসে, লা কার্টে মেনু সরবহার হরা হয়।[১০৪] ফ্রিকুয়েন্ট-ফ্লায়ার প্রোগ্রামবিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০১৩ সালের নভেম্বরে, বিমান লয়্যালিটি ক্লাব নামে ফ্রিকুয়েন্ট-ফ্লায়ার প্রোগ্রাম চালু করে।[১০৫] এটি গ্রাহকদের বিমানবন্দরে টায়ার্ড বেনিফিট, মাইলেজ বোনাস, অতিরিক্ত ব্যাগেজ, লাউঞ্জ প্রবেশাধিকার এবং চেক-ইন সুবিধার মতো বিভিন্ন পুরস্কার সেবা প্রদান করে।[১] জুলাই ২০১৪ সালের হিসাবে বিমানের ফ্রিকুয়েন্ট-ফ্লায়ার প্রোগ্রামে চার হাজার সদস্য ছিল।[১০৬] ক্লাবটিতে গোল্ড, সিলভার, গ্রিন- এই তিন ধরনের সদস্যতা চালু রয়েছে।[১] ২০১৭ সালে ক্লাবের অধীনে মানবিক রোবট সোফিয়াকে গোল্ড কার্ড প্রদানের মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীর সদস্যতা প্রদান করে।[১০৭] টিকেটিং২০০৭ সালে. আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা (আইএটিএ) নির্ধারিত ই-টিকেটিং নিয়ম প্রবর্তন করায় বিমান এমাডিউস নামক কোম্পানির সাথে চুক্তি করে। আইএটিএ-এর সদস্যদের জন্য এই ই-টিকেটিং নিয়ম চালু করার শেষ সময় ছিল ৩১ ডিসেম্বর ২০০৭। ই-টিকিটিং সুবিধা যাত্রীদের জন্য হারানো টিকিটের চাপ এবং ব্যয় হ্রাস করার নিশ্চয়তা দেয়।[১০৮] আইএটিএ-এর সদস্য হওয়া সত্বেও বিমান এই সময়সীমার মধ্যে ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালু করে নি। এর অন্যতম কারণ ছিল এমাডিউসের স্থানীয় অফিস, ২০০৫ সালে আদালত কর্তৃক মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ায় এর সকল কর্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েছিল।[১০৯] যদিও মাসখানেকের মধ্যেই উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে তারা কার্যক্রমে ফিরে আসে।[১১০] পূর্বে ২০১৩ সালে, বিমান জার্মান ই-টিকিটিং সংস্থা হহন এয়ারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, যার ফলে বিশ্বের যে কোনও স্থান থেকে বিমানের টিকিট ক্রয় করার সুযোগ রয়েছে।[১১১] পণ্য পরিবহনযাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি বিমান বাংলাদেশ, যাত্রীবাহী বিমানগুলোর মালামাল রাখার জায়গা ব্যবহার করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে পৌছানোর কাজও করে থাকে।[১১২] এই সুবিধার্থে বিমান বাংলাদেশ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি কার্গো ভিলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে, যেখানে বিদেশে পাঠানোর পূর্বে মালামাল মোড়কিকরণ এবং লেবেলযুক্ত করার কাজ করা হয়।[১১৩] ২০০৩-০৪ অর্থবছরে বিমান বাংলাদেশ মালামাল পরিবহনে ১৬.৫% প্রবৃদ্ধি অর্জন করে, যেখানে অন্যান্য মালবাহী বিমান পরিচালনা সংস্থা যেমন বিসমিল্লাহ এয়ারলাইন্স, বেষ্ট এভিয়েশন, এয়ার বাংলাদেশ সহ অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাগুলো একই অর্থবছরে ১০৮% প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। তা সত্বেও পণ্য পরিবহনে বিমান বাংলাদেশ দৃঢ় অবস্থানে ছিল। এই বেসরকারি সংস্থাগুলো পণ্য পরিবহন পরিসেবার বাজার ১০.৬% বৃদ্ধি করতে সক্ষয় হয়। মোট ৯৯,০০০ টন পণ্যের মধ্যে ৪৭% মালামাল বিদেশি বিমান পরিবহন সংস্থা, ২৪% বেসরকারি সংস্থা এবং বিমান মাত্র ২৯% মালামাল পরিবহন করেছিল।[১১৪] যাত্রীসেবার পাশাপাশি, পণ্য পরিবহনেও বিমানে বাংলাদেশ দূর্নিতিতে জড়িত হয়েছিল। ২০০৪ সালের এক তদন্ত প্রতিবেদন জানা যায় মধ্যপ্রাচ্যে বিমানের পণ্য পরিবহন পরিসেবায় বাংলাদেশ সরকার প্রায় মিলিয়ন ডলার রাজস্ব হারিয়েছে। ২০১৮ সালের মার্চে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ইউরোপের সমস্ত গন্তব্যে সরাসরি কার্গো বিমানের অনুমতি লাভের মাধ্যমে ইউরোপিয় ইউনিয়নের কাছ থেকে এসিসি৩ ও আরএ-৩ (তৃতীয় দেশের জন্য নিয়ন্ত্রক এজেন্ট) শংসাপত্র লাভ করে। এসিসি৩ বলতে কোনো তৃতীয় দেশের বিমানবন্দর থেকে ইউরোপগামী এয়ার কার্গো বা মেল ক্যারিয়ার বোঝায়। বাংলাদেশ সরকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নত করার পরে বিস্ফোরক সনাক্তকরণ ব্যবস্থা (ইডিএস), বিস্ফোরক সনাক্তকরণ কুকুর (ইডিডি) এবং বিস্ফোরক ট্রেস সনাক্তকরণ (ইডিটি) মেশিন স্থাপন সহ এর সুরক্ষা উন্নয়নের পরে এই শংসাপত্রগুলি লাভ করেছিল। সুরক্ষার মান উন্নত করার পর বিমান কার্গো ভিলেজ এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর একই সাথে এসিসি৩ এবং আরএ-৩ শংসাপত্র অর্জন করে। পাশাপাশি ইউরোপযুক্ত কার্গো ভাড়ার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি আরএ-৩ কমপ্লায়েন্ট গুদাম তৈরি করা হয়েছিল যেখানে বিমান বাংলাদেশে কর্মী ব্যতীত সকলের প্রবেশাধীর নিষেধাজ্ঞা জার করা হয়।[১১৫] বিমান বাংলাদেশ মোবাইল অ্যাপ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর, দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মোবাইল অ্যাপ উদ্ধোধন করেছিলেন। তিনি এছাড়াও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার পাশাপাশি বিমানের সোনার তরী এবং আচিন পাখির নামে নতুন দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার সংযোজন উদ্বোধন করেন। মোবাইল অ্যাপটি বিশ্বজুড়ে গ্রাহকদের ব্যবহারের জন্য বিনামূল্য উপলভ্য।[১১৬][১১৭] গন্তব্যসমূহজানুয়ারি ২০২০-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ] বিমান ২৫টি গন্তব্যে সেবা প্রদান করছে, যার মধ্যে ১৭টি আন্তর্জাতিক।[১১৮][১১৯][১২০] যদিও ভবিষ্যতে আরও ৪৩টি দেশে গন্তব্য সম্প্রসারণের জন্য বিমান বাংলাদেশের পরিসেবা চুক্তি রয়েছে।[১২১] বর্তমানে বিশ্বের ১৬ টি শহরে ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। এরমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি গন্তব্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি গন্তব্য এবং ইউরোপের লন্ডন এবং ম্যানচেস্টারে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বিমান।[১১৯] এশিয়া ও ইউরোপে চলাচলকারী রুটসমূহের মধ্যে রয়েছে- লন্ডন, ম্যানচেস্টার, রোম, মিলান, কুয়েত, দোহা, কুয়ালালামপুর, কোলকাতা, দিল্লি, কাঠমান্ডু, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, হংকং ইত্যাদি। বিমান ম্যানচেস্টার হয়ে চীনের গুয়াংজু, নিউ ইয়র্ক এবং টরন্টোতে গন্তব্য চালু করার ঘোষণা করেছে।[১২২] ক্রমেই বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো বিমানের পূর্বের লাভজনক গন্তব্যগুলি দখল করে নিচ্ছে। যেমন ঢাকা-লন্ডন রুটে যেখানে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও বিমান বাংলাদেশের একছত্র আধিপত্য ছিল[১২৩] সেখানে এমিরেটস ও এয়ার ইন্ডিয়া সহ অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলো এই রুটটিকে লাভজনক রুট হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিমান বাংলাদেশের এই বিমান স্বল্পতা ও অব্যবস্থাপনাকে কাজে লাগিয়ে ব্রিটেন প্রবাসীদের ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও রয়েল বেঙ্গল এয়ারলাইন্স সহ অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলো সিলেট-লন্ডন রুটে বিমান পরিবহন সেবা প্রদান করার পরিকল্পনা খতিয়ে দেখছে।[১২৪][১২৫] নিউ ইয়র্ক ও ম্যানচেষ্টারজানুয়ারি ২০২০-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ] পর্যন্ত, বিমানের স্বল্পতার এবং বিশেষত মার্কিন বিমান সংস্থা নিয়ন্ত্রকের (এফএএ) বেপরোয়া ও অযৌক্তিক কর্মের কারণে বাংলাদেশ বিমানের নিউ ইয়র্কের ফ্লাইটগুলি স্থগিত রয়েছে।[১২৬] ১৯৯৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ ব্রাসেলস হয়ে নিউ ইয়র্কের জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেবা প্রদান করে।[১২৭][১২৮] এই ঢাকা- নিউ ইয়র্ক রুটটি বিমানের সবচেয়ে সম্মানজনক রুট হিসাবে বিবেচিত হওয়ায় এবং বিমানের স্বল্পতা ও ক্রমবর্ধমান ক্ষতির সম্মুখিন হওয়া সত্বেও জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের ল্যান্ডিং স্লট ধরে রাখার জন্য বিমান অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যায়। কারণ একবার ল্যান্ডিং স্লট বাতিল হলে তা পূনরুদ্ধার করা দূরহ ছিল।[১২৯] ক্ষতির পরিমাণ কমাবার লক্ষে এবং ব্রিটেনের উত্তরে ম্যানচেষ্টারে বসবাসরত বাংলাদেশিদের চাহিদা পূরনের লক্ষে বিমান তাদের ফ্লাইট সপ্তাহে একটিতে কমিয়ে আনার পাশাপাশি নিউ ইয়র্ক যাওয়া এবং আসার পথে ম্যানচেষ্টারে যাত্রাবিরতী দেওয়ার পরীকল্পনা করে।[১২৮] ৮ এপ্রিল ২০০৬ সালে নিউ ইয়র্ক যাবার পথে বিমান সর্বপ্রথম ম্যানচেষ্টার বিমানবন্দরে অবতরন করে।[১৩০] যদিও এর আগে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তাদের আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সুরক্ষা মূল্যায়ন কর্মসূচি অনুসারে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার মান পূরণ না করায় বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর সংস্থা হিসেবে তুলিকাভুক্ত করেছিল।[১৩১] দ্বিতীয় শ্রেনীর সিভিল এভিয়েশন-এর অন্তর্ভুক্ত বিমান সংস্থাগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরগুলোতে অবতরন করতে কিছু বাধ্যবাধকতা সম্মুখিন হতে হয়। এই বাধ্যবাধকতা সত্বেও বিমান নিউ ইয়র্কে সেবা কার্যক্রম চালু রাখতে সক্ষম হয়েছিল কিন্তু ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো ও নতুন ল্যান্ডিং স্লট পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পরেছিল। দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত বিমান সংস্থাগুলো অন্তত দুই বছরের জন্য তাদের নির্ধারিত সময়সূচী এবং গন্তব্যে কোন ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে না। কিন্তু বিমান বাংলাদেশ নিউ ইয়র্ক-ঢাকা ফ্লাইটটি ব্রাসেল্সে ট্রানজিট না দিয়ে সেটি ম্যানচেষ্টারে ট্রানিজিট দেওয়ার মাধ্যমে নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য বিমানকে জরিমানা করে। ফলে বিমান ম্যানচেষ্টারে ট্রানজিট বাতিল করে পুনরায় ব্রাসেল্সে ট্রানজিট চালু করে।[১৩২] ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিমান বাংলাদেশকে তাদের ডিসি ১০ বিমানগুলি ২০০৫ সালের মধ্যে পরিবর্তন করার ব্যাপারে সতর্ক করে কারণ বিমানটি পুরানো হওয়ায় এতে ত্রুটির সম্ভাবনা থাকায় আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার মত যথেষ্ট সুরক্ষিত নয়।[১৩৩][১৩৪] ২০০৬ সালের ১৩ মে ডিসি ১০ বিমানের নিরাপত্তা জনিত কারণে এফএএ বিমানের বিজি০০১ (ঢাকা–ব্রাসেল্স–জেএফকে) ফ্লাইট নিউ ইয়র্কের আকাশসীমায় প্রবেশের অনুমতি দেয় নি।[১৩৫][১৩৬] পরে বিমানটি কানাডার মন্ট্রিয়ল-পিয়ের ইলিয়ট ট্রুডু আন্তর্জাতিক বিমনবন্দরে অবতরন করে এবং এর যাত্রীরা অন্য একটি বিমানে তাদের গন্তব্যে পৌছায়।[১৩৭] কানাডীয় বিমান প্রশানন বিমানটিকে পর্যবেক্ষণ করে কোন ত্রুটিহীন মন্তব্য করলে এফএএ পরবর্তীকালে দুঃখ প্রকাশ করে জানায় যে এটি তাদের ভুল ছিল।[১২৬][১৩৮] সেবার কানাডা থেকে বিমানটি কোন যাত্রী না নিয়েই ঢাকা ফিরে আসে। এই ঘটনার পর থেকেই পুরাতন হয়ে যাওয়া এই ডিসি ১০ বিমান[১৩৯] এবং প্রতি যাত্রায় প্রায় মার্কিন$৮০,০০০[১৩৫] ডলার লোকসান করতে থাকা এই রুটটি বিমান বন্ধ করে দেয়।[১৪০] এই বিমানটিকে অন্যান্য স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক রুটে চালিয়ে বিমান তার অব্যাহত লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে।[১৪১] তবে ২০০৭ সালে, সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিমানের নিউ ইয়র্ক রুটটি পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা করা হয়। এর পূর্বে জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ফ্লাইট পূনর্বহাল করার জন্য ২০০৮ সালের ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেধে দেয়, এবং এই সময়ের পরে স্থায়ীভাবে বিমানের অবতরন সময়সূচী বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।[১৪২] ক্ষতির সম্মুখিন হওয়া সত্বেও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় যুক্তরাজ্য সরকারের সাথে একটি চুক্তি পূনর্বিবেচনা করে, বিমান ২০১০ সালে ভাড়ায় আনা একটি বোয়িং ৭৮৭-৯ বিমান দিয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে বিমান পুনরায় সপ্তাহে তিনবার সরাসরি ঢাকা-ম্যানচেস্টার-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালু করার পরিকল্পনা করে।[১৪৩] লন্ডন১৯৭২ সালের ৪ মার্চ বিমান বোয়িং ৭০৭ ব্যবহার করে লন্ডনে সাপ্তাহিক ফ্লাইটের মাধ্যমে প্রথম আন্তর্জাতিক সেবা চালু করে। ২০২০ সালের জানুয়ারি অনুযায়ী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে সরাসরি উড়ে যায়। নতুন কেনা বোয়িং ৭৭৭ বিমান ব্যবহার করে সপ্তাহে দুটি যাত্রী ও দুটি কার্গো পরিবহন চালু করে। নতুন পরিচালনার অধীনে, বিমান বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে সময়ানুবর্তিতার পাশাপাশি অন-টাইম ফ্লাইটের কার্যকারিতাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে।[২১] অনিয়ন্ত্রিত সময়সূচীর জন্য পূর্বে ২০০৭ সালে বিমান লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দর ও দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সহ অন্যান্য বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো থেকে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়।[১৪৪] ২০০৭ সালের গ্রিষ্মে হিথ্রো বিমানবন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা বিএএ বিমানকে প্রমাণসহ একটি চিঠি দেয় যাতে উল্লেখ ছিল যে বিমান ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই বরাদ্দকৃত সময়সূচীতে হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরন করে নি যা আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশনের নিয়মানুযায়ী বাধ্যতামূলক। এবং পরবর্তী গ্রীষ্মে যদি বিমান লন্ডনে পরিসেবা চালু রাখতে চায় তাহলে হিথ্রো বিমানবন্দরের আশা ছেড়ে দিয়ে স্ট্যান্সড বা গেটউইক বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে।[১৪৫] পরবর্তী বছর বিএএ এর সাথে অলোচনায় বিমান এই মর্মে আশ্বস্ত করে যে এটি বরাদ্দকৃ অবতরন সময়সূচীর অন্তত পক্ষে ৮০% ব্যবহার করবে।[১৪৬] ফলে ২০০৮ সালে বিমান লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরনের অনুমতি পায়। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিমানের একটি ডিসি-১০ দিয়ে পরিচালিত ঢাকা-লন্ডন সরাসরি সেবার একটি বিমান হিথ্রো বিমানবন্দরে তার নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা পর পৌছালে বিমানটিকে হিথ্রোতে অবতরন করার অনুমতি না দিয়ে জ্বালানী ভরার জন্য গেটউইক বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।[১৪৭] ২০০৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বরে দ্য টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে হিথ্রো বিমানবন্দরের সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিমান সংস্থা হিসেবে আক্ষা দেওয়া হয় যার প্রত্তেকটি বিমানে প্রায় তিন ঘণ্টা করে দেরি হয়। ২০০৮ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং সময়সূচি না মানার কারণে এর কর্মীদের বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমণ না করার সতর্কতা জারি করে। তাসত্বেও যারা বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমণ করেছে তারা নিজ দায়িত্বে ভ্রমণ করেছে এবং তাদের বীমার টাকা দাবি করতে পারে নি। বাংলাদেশ বিমানের নুতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান ২০০৮ সালের এই ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানতেন না। তিনি আরও যোগ করেন যে সে সময় বিমান সময়সূচী মেনে চলতে হিমশিম খাচ্ছিল এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে।[১৪৮] হজ্জ্ব ফ্লাইটবাংলাদেশের হাজার হাজার মুসলিম প্রতি বছর হজ্জ পালন করতে মক্কায় যান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একমাত্র বাংলাদেশি বিমান সংস্থা যা জেদ্দার বাদশাহ আব্দুলআজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতি বছর হজ্জ্বযাত্রী পরীবহন করে। বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ যেমন প্রধানমন্ত্রী বা বিমান মন্ত্রী প্রতি বছর এই হজ্জ্ব ফ্লাইটের উদ্বোধন করে থাকেন।[১৪৯][১৫০][১৫১] বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে একবার বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর জন্য এই পরিসেবা উন্মুক্ত করেছিল।[১৫২] এয়ার বাংলাদেশ হল সর্বপ্রথম বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা যারা হজ্জ্ব ফ্লাইট পরিচালনা করে। কিন্তু বেসরকারি এই বিমান সংস্থা সেই বছর বিবিন্ন যাত্রায় প্রায় সর্বোচ্চ নয় দিন পর্যন্ত বিলম্ব করায় পুনরায় বিমান বাংলাদেশ একচ্ছত্র আধিপত্যে ফিরে যায়।[১৫১][১৫৩] বিমানের হজ্জ্ব ফ্লাইটগুলো আজ পর্যন্ত কখনই ঝামেলামুক্ত ছিল না। ২০০৫ সালে হজ্জ্ব ফ্লাইটের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া ধার্য করার অভিযোগে তৎকালীন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ করেন।[১৫৪] ২০০৬ সালে বর্ধিত চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিমান বাংলাদেশের সমস্ত হজ্জ্ব ফ্লাইট থেকে প্রথম শ্রেণী সরিয়ে নেয়ার মত নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নেয়।[১৫৫] অপরদিকে হজ্জ্ব এজেন্সিগুলো নিয়মনীতি মেনে না চলার জন্য হজ্জ্বযাত্রীদের ভিসা প্রাপ্তি বিলম্ব হলে বিমান বাংলাদেশকে প্রায় ১৯টি যাত্রা বাতিল করতে হয়। আবার এই ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার অবসান হওয়ার পর বিমান বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই অতিরীক্ত যাত্রীর জন্য অতিরীক্ত বিমান যোগাড় করতে ব্যার্থ হয়।[১৫৬][১৫৭] ২০০৭ সালে বিমানের হজ্জ্ব ফ্লাইটের সমস্যা সমাধানের জন্য সাবেক তত্বাবধায়ক সরকার তিন বছর মেয়াদী পরীকল্পনা গ্রহণ করে। এই পরীকল্পনা অনুসারে বাংলাদেশের অন্য দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও হজ্জ্ব ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হয়।[১৫৮] বিমান বাংলাদেশ হজ্জ্ব ফ্লাইট পরীচালনার জন্য ফুকেট এয়ার থেকে দুটি বিমান লিজ নেয়। ফুকেট এয়ারকে চুক্তি অনুযায়ী ১০% অগ্রিম দেওয়ার কথা থাকলেও তারা ৩০% অগ্রিম দাবি করে বসলে ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে এই চুক্তি শেষ হয়ে যায়।[১৫৯] ফুকেট এয়ারের জায়গা পূরণ করতে একটি রি-টেন্ডারের মাধ্যমে অষ্ট্রেলিয়ার আসবান এরোনেটিক্সকে পরবর্তীতে নির্বাচন করা হয়।[১৬০] ২০০৮ সালে বিমান সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফ্লাইট পরিচালনা করতে নাইজেরিয়ার কাবো এয়ার থেকে একটি ৫৪২-সিটের বোয়িং ৭৪৭-২০০ ইজারা নিয়েছিল।[১৬১] ওরিয়েন্ট থাই এয়ারলাইন্স থেকে আরও একটি ৫১২-সিটের বোয়িং ৭৪৭-৩০০ ইজারা নেওয়া হয়েছিল।[১৬২] ২০১২ সালের আগস্ট মাসেও বিমান হজ্ব ফ্লাইট নিয়ে একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়। ২০১৩ সালে হজ্ব ফ্লাইটগুলো কিছুটা বিলম্বিত হলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় যাত্রীদের দূর্ভোগ কিছুটা কমই হয়েছে। জুন ২০১৪-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], বিমান তাদের নির্ধারিত পরিসেবাগুলি সরবরাহ করতে অসুবিধার সম্মুক্ষিণ হয়েছিল, কারণ ক্যারিয়ার হজ মৌসুমে জেদ্দায় হজযাত্রীদের যাতায়াতকে বিমানে অগ্রাধিকার দিয়েছিল ফলে হজ্ব ফ্লাইট সময়সূচী ঠিক রাখতে গিয়ে অন্যান্য গন্তব্যসমূহে অনিয়মিত হয়ে পরে।[১৬৩][১৬৪] তা সত্বেও বিমান হজ্ব ফ্লাইট পরিচালনা করে প্রায় একশ কোটি টাকা লাভও করে যা ১৯৭৩ সালের পর বিমানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।[১৬৫] এছাড়া ২০১৪ সালের হজ্ব ফ্লাইটে আরও দুটি ফ্লাইট যোগ করার কথা জানায় বিমান কর্তৃপক্ষ।[১৬৬] উড়োজাহাজ বহরবর্তমান বহরডিসেম্বর ২০২২-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর বহরে নিম্নোক্ত বিমানসমূহ রয়েছে:[১৬৭][১৬৮]
বহরের ইতিহাস১৯৭২–২০০০একটি পুরাতন দগলাস ডাকোটা এবং ডিসি-৩ বিমান দিয়ে বিমান বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়।[৩২] ঢাকা থেকে সিলেট ও চট্টগ্রামের স্থানীয় রুটগুলো শুরু হয় চারটি ফকার ফকার এফ২৭ বিমান অধিগ্রহণের মধ্যমে। অপরদিকে ব্রিটিশ ক্যালিডোনিয়ান থেকে একটি বোয়িং ৭০৭ চাটার্ড বিমান আনার পর বিমানের আন্তর্জাতিক পরিসেবা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স থেকে তিনটি ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-১০-৩০ বিমান ক্রয়ের মাধ্যমে লম্বা দূরত্বের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো চুলু করা সম্ভব হয়।[২২][৩২] ৪০,০০,০০০ মার্কিন ডলার (২০১৯ সালে ৪২,৫০২,০১৩ ডলারের সমতুল্য) চুক্তিতে ১৯৮৯ সালের শেষদিকে তিনটি ব্রিটিশ এরোস্পেস এটিপি অর্ডার করা হয়েছিল।[১৭৬] এই এটিপিগুলি ১৯৯০ সালের শেষদিকে ফকার এফ-২৭ বিমানগুলির মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা হয়।[১৭৭] ১৯৯০ সালের মধ্যভাগে বিমান তার লম্বা দুরত্বের রুটগুলির জন্যে এয়ারবাস সিরিজের বিমানগুলির প্রতি নজর দেয়। ১৯৯৫ সালে, দুটি পিডব্লিউ ৪০০০ চালিত এয়ারবাস রএ৩১০-৩০০-এর আদেশ দেওয়া হয়েছিল;[১৭৮][১৭৯] যার মধ্যে প্রথমটি ১৫ জুন ১৯৯৬ সালে বহরে যুক্ত হয়েছিল।[১৮০] তবুও বিমান তাদের প্রবীণ ডিসি–১০ বিমানগুলি ব্যবহার অব্যহত রাখে। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ডিসি ১০-৩০ বিমানগুলো কোনপ্রকার উল্লেখযোগ্য যান্ত্রিক গোলোযোগ ছাড়াই বিমান বাংলাদেশের একমাত্র সুপরিসর বিমান হিসেবে ভালভাবেই সেবা দিয়েছে। এই বিমানগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্তর্জাতিক সেবা প্রদানের কাজে ব্যবহার করা হত। অন্যদিকে ঘরোয়া রুটগুলোতে ফকার এফ২৭ এবং বিএ এটিপি বিমানগুলো ব্যবহার করা হত যেগুলো প্রায়শই যান্ত্রিক গোলোযোগের শিকার হয়ে পরে থাকত। একবার বাংলাদেশ সরকারের এক মন্ত্রী বিমানে চড়ে যখন জানতে পারলেন যে তিনি যে বিমানটিতে চড়েছেন সেটি ব্রিটিশ এরোস্পেস এটিপি বিমান তখন তিনি তার বিমান যাত্রা বাতিল করে সড়কপথে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।[১৮১] ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে বিমান দুটি বোয়িং ৭৩৭-৩০০ ইজারা নিয়েছিল যা আঠার মাসের জন্য আভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক রুটে ব্যবহৃত হয়েছিল।[১৮২] ম্যাকডোনেল ডগলাস ডিসি-১০এস এবং এয়ারবাস এ৩১০-৩০০ ২০১১ সালে আধুনিক বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর বহরে যুক্ত হবার আগে বিমানের বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক রুটে সেবা দিত।[১৮৩] ২০১২ সালে অবসর নেওয়ার পূর্বে, ফকর এফ২৮ দেশীয় এবং আঞ্চলিক রুটগুলির জন্য বহরের অবশিষ্ট অংশ ছিল।[১৮৪] বিমানের বহরে দ্বিতীয় সর্বশেষ ডগলাস ডিসি–১০ বিমান যার উৎপাদন (এল/এন ৪৪৫) বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯৯৬ সালে বিমানের দুটি নতুন এয়ারবাস এ৩১০ কেনার পরে তিনটি এয়ারবাস এ৩১০–৩০০ তৈরি করা হয়েছিল।[১৮৫] বিমান বাংলাদেশের সর্বশেষ ক্রয়কৃত বিমানটি থাইল্যান্ডের পিবিএয়ার থেকে কেনা। ১৯৯৭ সালে তৈরি এই ফকার এফ২৮-৪০০০এস বিমানটি ২০০৪ সালে ২.৯১ নিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে কেনা হয়েছিল।[১৮৬] ১৯৭৭ সালে নির্মিত বিমান দুটি বিমানের সর্বশেষ অধিগ্রহণকৃত ও বহরের সবচেয়ে পুরানো বিমান হওয়া সত্বেও বিমানটি বর্তমান বহরের মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন।[১৮৭] এই পুরাতন হয়ে যাওয়া বিমানগুলোর কারণে অধিকাংশ সময়ই বিমান বাংলাদেশ এর বিমানের সময়সূচী বজায় রাখতে হিমশিম খায়।[১৪৪][১৮৮] পুরাতন যামানার বিমানগুলোর সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এগুলোর অনেক বেশি রক্ষনাবেক্ষনের প্রয়োজন হয় এবং উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এর খুচরা যাওন্ত্রপাতি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পরে।[১৮৯] এই বিমানগুলি কখনই লম্বা দূরত্বের রুটে ডিসি ১০ বিমানগুলির জায়গা দখল করতে পারে নি যদিও ডিসি ১০ বিমান বিভিন্ন দেশে নিরাপত্তা জনিত কারণে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। ডিসি–১০ বিমানগুলির জন্য তাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি জার্মান কোম্পানির সাথে তিন বছরের চুক্তি ২০১২ সালের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।[১৯০] বিমান সবসময় এর ফকার এফ২৭, ডিসি-১০-৩০ এবং এয়ারবাস এ৩১০-৩০০ বিমানগুলোর রক্ষনাবেক্ষণ সহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করে থাকে।[১৯১] ২০০০-এর দশক২০০০ সালে, বিমান তাদের ডিসি-১০ বিমানগুলোকে প্রতিস্থাপন করার জন্য মোট চারটি সুপরিসর বিমান অধিগ্রহণ করার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলেও বেসরকারিকরণ সহ সকল প্রস্তাব ফাইলবন্দি হয়ে পরে থাকে।[১৯২] ২০০৫ সালে আরেকটি প্রস্তাবে বিমান এয়ারবাস এবং বোয়িং কোম্পানির দশটি সুপরিসর বিমান কেনার আগ্রহ দেখায় যার মূল্য ছিল প্রায় মার্কিন$১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।[১৯৩] বোয়িং এই ক্রয় প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকারের নিশ্চয়তা প্রদান সাপেক্ষে অর্থায়নের অগ্রহ প্রকাশ করে। তবে আমলাতান্ত্রিক সময়ক্ষেপণ এবং সরকারের প্রতিশ্রুতির অভাবে বোয়িং এই প্রস্তাবে অগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং প্রস্তাবটি বাতিল করে।[১৮৯] স্বল্প দূরত্বের এবং ছোট বিমান কেনার আরও একটি প্রস্তাবও একই কারণে ঝুলে থাকে।[১৯৪] মার্চ ২০০৭ সালে, দুটি এয়ারবাস এ৩১০-৩০০ এবং দুটি এয়ারবাস এ৩০০-৬০০ বিমান ভাড়া নেওয়ার জন্য বিমান একটি টেন্ডার আহ্বান করে।[১৯৫] এই টেন্ডারে একমাত্র অংশগ্রহণকারী ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক স্টার এভিয়েশন।[১৯৬] পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হওয়ার পর বিমান বাংলাদেশের পুরাতন বিমানগুলোকে নতুন প্রজন্মের বিমানের মাধ্যমে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করে। এরই অংশ হিসেবে ২০০৭ সালের নভেম্বরে বোয়িং কোম্পানিকে চারটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ এবং চারটি বোয়িং বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান যথাক্রমে ২০১৩ এবং ২০১৭ সালে সরবরাহ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই বিমানগুলোর গড় সর্বনিম্ন দর ছিল মার্কিন$১৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে এয়ারবাস কোম্পানি বিমানকে বোয়িংয়ের চেয়ে সস্তা দরে তাদের এয়ারবাস এ৩২০ অথবা এয়ারবাস এ৩৩০ সিরিজের বিমান সরবরাহ করার প্রস্তাব দেয়। অপরদিকে বিমান বাংলাদেশের সাম্প্রতিক দৈনন্দিন সময়সূচী পালনের জন্য ২০০৮ সালে ক্রয়ের সুবিধা সহ পুরাতন এয়ারবাস এ৩১০-৩০০ বিমান ভাড়ার দরপত্র আহ্বান করে।[১৯৭] ২০০৮ সালের মার্চে বিমানের পরিচালনা পর্ষদ মার্কিন$১.২৬ বিলিয়ন ব্যয়ে বোয়িং কমার্শিয়াল এয়ারপ্লেন্স থেকে আটটি নতুন প্রজন্মের সুপরিসর বিমান কেনার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এগুলির মধ্যে প্রথম চারটি বিমান হল বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর (প্রত্তেকটির গড় মূল্য মার্কিন$১৮২.৯ মিলিয়ন), এবং ২৯৪ সিটের চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার (প্রত্তেকটির গড় মূল্য মার্কিন$১৩৩.৩১ মিলিয়ন), যেগুলি ২০১৭ সালে সরবাহ করা কথা ছিল।[১৯৭] ২০০৮ সালের এপ্রিলে বিমান বোয়িংয়ের সাথে এই আটটি বিমানের অধিগ্রহণের চুক্তি সই করেছিল।[১৯৮] এছাড়াও বিমান মার্কিন$১.৫৪ মিলিয়ন[১৯৯] প্রাথমিক কিস্তি পরিশোধ সাপেক্ষে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ কেনার জন্য সমঝোতা স্মারক অন্তর্ভুক্ত করেছে, যেগুলি ২০১৫ সালে বহরে যুক্ত হবার কথা ছিল।[২০০][২০১] বাকি অর্থ যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এক্সিম ব্যাংক ৮৫% এবং বাকী অংশ স্থানীয় বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো অর্থায়ন করবে।[২০২] এই চুক্তির কিছুদিন পরেই বিমান বাংলাদেশ বোয়িংয়ে সাথে আভ্যন্তরীণ রুটগুলো পরিচালনার জন্য আরও চারটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান কেনার চুক্তি করে এবং এ ধরনের আরও দুটি বিমানের বিকল্প নির্বাচন করে।[২০৩] এই দশটি বিমানের জন্য দরপত্রের মোট মূল্য ছিল প্রায় মার্কিন$২.৫ বিলিয়ন ডলার।[২০৪] ২০১০-এর দশকে২০১০ সালে, বিমান ইউরো আটলান্টিক এয়ারওয়েজের দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ইআর ইজারা নিয়েছিল। ২০১১ সালে প্রথম দুটি নতুন বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর গ্রহণ করার পূর্বে এই বিমানগুলি মূলত অন্তর্বর্তীকালীন সময়কালের জন্য ইউরোপিয় গন্তব্যে যাওয়ার পথে ব্যবহৃত হত।[২০৫] এই দুটি ব্র্যান্ডের নতুন ৭৭৭-৩০০ইআর সরবরাহ প্রাপ্তি সুরক্ষিত করতে বিমান জেপিমারোগান চেজ সংস্থা থেকে দেওয়া প্রাথমিকভাবে মার্কিন$২৭৭ মিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করে।[২০৪][২০৬][২০৭] একটি নতুন লিভার পরিহিত, ক্যারিয়ার ২০১১ সালের অক্টোবরের শেষদিকে তার প্রথম বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর সরবরাহ গ্রহণ নিয়েছিল।[২০৮][২০৯] এটি ছিল বোয়িং কর্তৃক সরবরাহকৃত ৩০০তম ৭৭৭-৩০০ইআর।[২১০][২১১] বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর সরবরাহকৃত ৩০১তম বিমানটিও বহরে যুক্ত হয়।[২১২] ২০১১ সালের নভেম্বরের শেষদিকে এয়ারলাইন্স এটি দখল করে নেয়।[২১৩] আকাশ প্রদীপ নামে তৃতীয় বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্যারিয়ারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।[২১৪] রাঙ্গা প্রভাত নামে চতুর্থ বিমানটি ২০১৪ সালের মার্চে বহরে যোগ দিয়েছিল।[২১৫] প্রারম্ভিকভাবে বাংলাদেশ সরকার বোয়িংকে ৩৫৬ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন করে, যার মধ্যে ২৯০ মিলিয়ন এক্সিম ব্যাংক এবং বাকি অর্থ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক পরিশোধ করে।[২১৬] ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, কুয়েত একটি স্টপওভার দিয়ে ঢাকা-বার্মিংহাম রুটে সর্বশেষ ফ্লাইট পরিচলনার পর বিমান তাদের ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-১০ বহরের ইতি টানে। একই বছর, ২২-২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যারিয়ারটি বার্মিংহামে প্রতিদিন তিনটি করে নয়টি পৃথক ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল।[২১৭] এরপরে বিমানটি স্ক্র্যাপ হিসাবে বিক্রির জন্য দেওয়া হয়েছিল।[২১৮][২১৯] ২০১৬ সালের অক্টোবরে এয়ারবাস এ৩১০-৩০০ পরিসেবা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।[২২০][২২১] ২০১৪ সালের মার্চে ক্যারিয়ারটি ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ইআর বিমান ভাড়া নেয়।[২২২] পরিবহনের রুট সম্প্রসারণের অনুমতি প্রাপ্তির জন্য, বিমান তার বহর ১৬টি বিমানে প্রসারিত করার পরিকল্পনা করেছে।[২২৩] নতুন ইজারা নেয়া ড্যাশ ৮-কিউ ৪০০ বিমানের সাথে ক্যারিয়ারটি ২০১৫ সালের এপ্রিলে, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী এবং বরিশালে পুরোদমে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু করেছিল।[২২৪] স্মার্ট এভিয়েশন কোম্পানির নিকট থেকে পাঁচ বছরের জন্য ইজারা নেওয়া দুটি বিমান কলকাতা ও ইয়াঙ্গুনের আঞ্চলিক ফ্লাইটে চলাচল শুরু করে।[২২৫] প্রাথমিকভাবে ২০১৩ সালের নভেম্বরে এটি পুনরায় চালু হওয়ার কথা ছিল, তবে বিমানের স্বল্পতার কারণে বিমান এতে ব্যর্থ হয়েছিল।[২২৬] ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে, ঘোষণা করা হয়েছিল যে বিমান তাদের নিজস্ব তিনটি ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ সংগ্রহ করবে যা অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক রুটে চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্মার্ট এভিয়েশন কোম্পানি থেকে ইজিারা নেওয়া বর্তমান বিমান প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যবহৃত হবে।[২২৭] ইজিপ্ট এয়ারের নিকট থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ইআর ইজারা নেওয়ার নির্ভরযোগ্যতা সমস্যার কারণে,[২২৮] ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বিমান ঘোষণা করেছিল যে ইজারা শেষ হওয়ার এক বছর আগেই ২০১৮ সালের মার্চ এবং মে মাসে বিমানটি ফিরে আসবে।[২২৯][২৩০] ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট, চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের মধ্যে প্রথমটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় এবং এটি ৫ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক এটি আকাশ বীনা নামকরণ করা হয়েছিল।[২৩১] ড্রিমলাইনার নামের পাশেই, ককপিটের নিচে, পোর্টের পাশে ইংরেজিতে এবং স্টারবোর্ডে বাংলায় নামটি লেখা রয়েছে।[২৩২] ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর, দ্বিতীয় বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারটি ১৫৩ম ফ্লিট হিসাবে বিমানের বহরে যোগ দেয়, এবং এর সিরিয়াল নম্বর হিসাবে বিজি-২১১২ এর পাশাপাশি বাংলায় "হাংস বলাকা" নামকরণ করা হয়।[২৩৩] "রাজ হ্যাংশা" নামে সর্বশেষ বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানটি ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে বিমানের বহরে যোগ দেয়ে।[২৩৪] চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ গ্রহণ করার পরে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ক্রয়ের আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।[১৭৩] চীন ভিত্তিক হাইনান এয়ারলাইন্স তাদের ৩০টি ড্রিমলাইনারের অর্ডার বাতিল করার পর বোয়িং কোম্পানি বিমানের নিকট প্রস্তার রাখে এবং পরবর্তী দুইটি ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের প্রতিটি মার্কিন$১৫০ মিলিয়ন ডলার দামে বিমানের কাছে বিক্রয়ের জন্য রাজি হয়। এই দুইটি বিমান ২১ ও ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে বিমানের বহরে যুক্ত হয় এবং দুটি বিমানের নাম সোনার তরী এবং অনিন পাখি রাখা হয়।[১৭২][১৭৪] ২০২০-এর দশকে২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিমান আরও দুটি ড্যাশ-৮ কিউ৪০০এনজি শর্ট বোডি বিমান কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। প্রস্তাবটি করা হয়েছিল মূলত অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক রুটে ফ্লাইটের ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে।[২৩৫] এছাড়া, আরও চারটি বোয়িং ৭৮৭-৯ কেনার আলোচনা চলছে যা হাইনান এয়ারলাইন্সের থেকে নেওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ভিস্তারা থেকে নেয়া হয়।[২৩৬] এছাড়া, বিমান অদূর ভবিষ্যতে কার্গো বিমান কেনার ঘোষণা জানায়।[২৩৭] বিমান বাংলাদশের পূর্বোক্তোন বিমানসমূহবিমান বাংলাদশের বিমান পরিচালনার ইতিহাসে নিম্নোক্ত বিমানসমুহ ব্যবহার করা হয়েছে:[২৩৮]
প্রতীকআধুনিক বাংলায় বিমান শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ ভিমান থেকে। প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে ভিমান শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে এমন একটি যন্ত্র বোঝাতে যা উড়তে সক্ষম। বিমানের প্রতীক হিসেবে লেজে লাল বৃত্তের ভিতরে সাদা বলাকা অঙ্কিত চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। প্রতীক নকশা করেছেন চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান।[২৪০] তবে শুরুর দিকে বিমানের নাক থেকে শুরু করে জানালার উপর দিয়ে লেজ পর্যন্ত একটি গাঢ় নীল লাইন বিমান বাংলাদেশের প্রতীক ছিল। এই গাঢ় নীল লাইনটি আশির দশকে পরিবর্তন করে বাংলাদেশের পতাকার সাথে মিলিয়ে লাল ও গাঢ় সবুজ রঙের লাইন ব্যবহার শুরু হয় যা পরবর্তীতে দুই দশক ধরে প্রচলিত ছিল। ২০১০ সালে বিমান বাংলাদেশ একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে এর সবধরনের প্রতীকেই পরিবর্তন আনা হয়। সেই বছরই টেগুর নকশাকৃত বিমানের নতুন প্রতীক উন্মোচন করা হয় এবং ভাড়ায় আনা বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৩৭ বিমানে তা প্রথমবারের মত ব্যবহার করা হয়।[২৪১] তবে সরকার পরিবর্তনের পর বিমান তার পুরোনো প্রতীকে ফিরে যায় কারণ নতুন প্রতিকটি আকর্ষণীয় ছিল না এবং এটি বিমান ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করত না। পরবর্তিতে বিমান ২০১১ সালে পুরাতন প্রতীকের একটি পরিমার্জিত ও আধুনিক রূপ সংযোজন করে যা প্রথম বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর বিমানে প্রদর্শিত হয়। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশের সব বিমান এই নতুন প্রতীক ব্যবহার করছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পূর্ব সদর দফতরের নাম রাখা হয়েছে বলাকা ভবন[২৪২][২৪৩][২৪৪] যা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত। বিমান ভবনের সামনে বলাকা নামে একটি বকের ভাস্কর্য রয়েছে।[২৪৫] বাংলাদেশী ভাস্কর, মুরাল, পোড়ামাটি এবং ল্যান্ডস্কেপিং শিল্পী মৃণাল হক ভাস্কর্যটির নকশা প্রণয়ন এবং নির্মাণ করেছেন।[২৪৬] দূর্ঘটনাজুলাই ২০১৯-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্ক এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্ক বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১২টি দুর্ঘটনা নথিভুক্ত করেছে, যার মধ্যে দুটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।[২৮]
চিত্রশালা
আরও দেখুনতথ্যসূত্র{{সূত্র তালিকা|3|refs= [২১০] [২৩৮] [১৬৮] [১৭৬] [১৩৫] [৮৩] [১৩৬] [১১] [১৫] [১৯] [১৫২] [১৫৩] [১৮০] [৮১] [৩২] [৭] [৮] [১১৮] [২১৩] [৭০] [২০৪] [৪৭] [২৫৯] [২০০] [৬৪] [৮৯] [১৬৩] [১৬৫] [৮৭] [১৪৭] [১৪৪] [৬৭] [২০] [২৪১] [২৬৫] [২১৬] [৭১] [২০৬] [৯৬] [১৬১] [১২৮] [৪৪] [২৫৬] [৪৮] [১৬২] [১১০] [২৩৯] [১৬৪] [২২১] [৬৮] [২০২] [২৪২] [৮০] [৭৩] [২৪৩] [১৯৪] [১৯৭] [১৯৯] [২২০] [১২৯] [৫১] [১৭৯] [১৪২] [৮৫] [৪১] [২১৪] [৪৯] [৭৯] [৯০] [২১১] [২০৩] [১৯৮] [২৫৭] [১১১] [১২৬] [৪০] [২৬] [২৯] [২৭] [৩১] [১৭৭] [২৪৫] [২৫৪] [২০৭] [৪২] [৭৫] [৯২] [৪৫] [১৯০] [১৭৮] [২০৫] [১৩৯] [৬৬] [১৫৯] [২৬০] [১৫০] [৮৮] [১৮৯] [২৪৪] [১৮১] [২২২] [৫৬] [৫৭] [৯১] [৪৩] [১৫১] [২০৯] [৩৯] [১৪৮] [১৩৮] [৯] [৭৬] [২১২] [১৫৮] [৫৮] [২০৮] বহিঃসংযোগউইকিমিডিয়া কমন্সে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।
|