শফিউল আলম প্রধান
শফিউল আলম প্রধান একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ। তিনি জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন। প্রাথমিক জীবনশফিউল আলম প্রধান ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারী পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার টোকরাভাষা গ্রামের প্রধান পাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। শফিউল আলম প্রধান ১৯৬৬ সালে ঢাকার সিদ্দেশ্বরি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করে, বোরহান উদ্দিন কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সালে কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিএস নির্বাচিত হন। কলেজ জীবন শেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পরেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৯-১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের ভিপি নির্বাচিত হন। শফিউল আলম প্রধান ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ব্যাক্তিগত জীবনশফিউল আলম প্রধানের পিতা মৌলভী গমির উদ্দিন প্রধান অবিভক্ত পাকিস্তান মুসলিম লীগের সভাপতি এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার ছিলেন এবং মাতা সামসুন নাহার প্রধান গৃহিণী ছিলেন। ৬ ভাইবোনের মধ্যে শফিউল আলম প্রধান ৪র্থ। শফিউল আলম প্রধানের সহধর্মিণী অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান। রেহানা প্রধান নিজেও ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি এবং শফিউল আলম প্রধানের মৃত্যুর পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি লালমাটিয়া মহিলা কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপিকা ছিলেন। অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন। শফিউল আলম প্রধানের একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান। তিনি আইন পেশার সাথে জড়িত এবং বর্তমানে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি - জাগপা'র সভাপতি। শফিউল আলম প্রধানের একমাত্র পুত্র আল রাশেদ প্রধান জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি - জাগপা'র সহ-সভাপতি এবং ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক। কর্মজীবনশফিউল আলম প্রধান ১৯৭১ সালের ২৩ শে মার্চ দিনাজপুরে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯৭৩ থেকে ৭৪ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।[১] ১৯৭৪ সালের ৩০ মার্চ তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিজ দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৪ জন দুর্নীতিবাজের তালিকা ঢাকার বাইতুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে প্রকাশ্য জনসভায় প্রকাশ করেন। তার মাত্র ৪ দিন পরে ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের সাত হত্যা মামলায় তাকে প্রধান আসামী করা হয়। তার সর্মথকেরা এটিকে তৎকালীন সরকারের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে। বিচারে শফিউল আলম প্রধানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে মামলার পুনঃ তদন্তে আদালতের মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে ৪ বছর কারাগারের জীবন কাটিয়ে ১৯৭৮ সালে তিনি মুক্তি পান। ১৯৮০ সালের ৬ এপ্রিল রাজধানী ঢাকার রমনা গ্রিনে তিনি জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা প্রতিষ্ঠা করেন।[১] শফিউল আলম প্রধান দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা লংমার্চ, বেরুবারি লংমার্চ, ইয়াসমিন আন্দোলনসহ আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলন এবং বক্তব্যের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। মৃত্যুশফিউল আলম প্রধান ২০১৭ সালের ২১শে মে ঢাকার আসাদ গেটের বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[২][৩] ২১শে মে আসাদ গেটে নিজ বাসভবনে ১ম জানাজা, দিনাজপুরে দ্বিতীয় জানাজা, পঞ্চগড়ে ৩য় জানাজা এবং ২২শে মে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ৪র্থ জানাজার পরে তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। তথ্যসূত্র
|