আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ (চলচ্চিত্র)
আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ (ইংরেজি ভাষায়: A Clockwork Orange) ১৯৭১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ডিস্টোপিয়ান অপরাধ চলচ্চিত্র, যা অ্যান্থনি বার্জেসের একই নামের উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা, পরিচালনা ও সহ-রচনা করেছেন স্ট্যানলি কুবরিক। চলচ্চিত্রটি মানসিক রোগ, কিশোর অপরাধ দমন, যুবক গ্যাং, এবং অন্যান্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও ডিস্টোপিয়ান সময়ের কাছাকাছি ভবিষ্যত ব্রিটেনের অর্থনৈতিক বিষয়ের ওপর মন্তব্য করতে বিরক্তিকর, হিংসাত্মক চিত্রসমূহ ফুটিয়ে তুলেছে। চলচ্চিত্রে ম্যালকম ম্যাকডাওয়েল বিকৃত মানসিকতার অধিকারী যুবক অ্যালেক্স ডিলার্জ-এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। অ্যালেক্সের মূল আকর্ষণ ধ্রুপদী সঙ্গীত (বিশেষত বেটোফেন), ধর্ষণ ও অতিমাত্রায় সহিংসতা। ছবির বর্ণনাকারীও এই অ্যালেক্স। তার বর্ণনার ভাষা ন্যাডস্যাট, এর সাথে স্লাভীয়, ইংরেজি ও ককনি ছড়ায় ব্যবহৃত অশ্লীল শব্দও ছিল। ছবিতে অতিমাত্রায় সহিংসতা ও অশ্লীলতা ব্যবহার করা হয়েছে। ভবিষ্যৎ ইংল্যান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে মনঃরোগ, কিশোর অপরাধ এবং এ ধরনের বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরার জন্যই এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। ছবির সাউন্ডট্র্যাক ধ্রুপদী সঙ্গীতের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ওয়েন্ডি কার্লোস-এর মুগ সিনথেসাইজারের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। ধ্রুপদী সঙ্গীত ও মুগ সিনথেসাইজারের বাইরে কেবল একটি গানই ছিল যার শিরোনাম "সিংইং ইন দ্য রেইন"। নায়ক ম্যালকম ম্যাকডাওয়েল এই গানটি পুরো মুখস্থ পারতেন। এ কারণেই কুবরিক তা সাউন্ডট্র্যাকে সংযুক্ত করেন। কাহিনীসংক্ষেপঅ্যালেক্স ডিলার্জ (ম্যালকম ম্যাকডাওয়েল) ভবিষ্যৎ ইংল্যান্ডের এক শহরে একটি ছোট কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান। গ্যাংয়ের সদস্য অ্যালেক্সসহ চার জন। তারা স্কুলে যায় না। সারাদিন ঘুমায়। বিকেল হলেই বেরিয়ে পরে। স্থানীয় করোভা মিল্ক বার-এ একত্রিত হয়। সন্ধ্যা হলেই যতসব অপকর্ম শুরু করে। রাস্তাঘাটে লোকজনকে ধরে পিটানো, নির্মমভাবে ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি কিছুই বাদ যায় না। এক পর্যায়ে অ্যালেক্সের সাথে তার বন্ধুদের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। অ্যালেক্সের একাধিপত্যই এর কারণ। এক বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে অ্যালেক্স বাড়ির মহিলাকে খুন করে। অন্য তিনজন তাকে মেরে বাড়ির দরজার সামনে ফেলে রাখে। সে পুলিশের হাতে ধরা খায়। এই পর্যায়ে তার কারাগার জীবন দেখানো হয়। কারাগার থেকে তাকে লুডোভিকো মেডিকেল সেন্টারে পাঠানো হয়। এই হাসপাতালে আসামীদেরকে লুডোভিকো কৌশলের মাধ্যমে খারাপ থেকে ভাল মানুষে পরিণত করা হয়। এই চিকিৎসার মাধ্যমে অ্যালেক্স ভাল মানুষে পরিণত হয়। প্রকৃতঅর্থে অবশ্য ভাল নয়। এখনও তার খারাপ কাজগুলো করার ইচ্ছা থাকবে, কিন্তু সে চাইলেও সেগুলো করতে পারবে না। জেল থেকে ছাড়া পাওয়া খুনের আসামীকে সমাজ ভালভাবে নেয় না। অচিরেই অ্যালেক্সের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠে। যেসব রাজনৈতিক ও সমাজকর্মী লুডোভিকো কৌশলের বিপক্ষে ছিল তারা এর সুযোগ নেয়। এভাবে অপরাধ ও শাস্তির চিরন্তন দ্বন্দ্ব্ব ফুটিয়ে তোলা হয় সিনেমাটিতে। চরিত্রসমূহ
অভ্যর্থনসমালোচকদের প্রতিক্রিয়াঅধিকাংশ সমালোচকই ছবিটির প্রশংসা করেছেন। রিভিউ সংগ্রাহক ওয়েবসাইট রটেন টম্যাটোস-এ ছবিটির রেটিং ৯০%। আইএমডিবি-তে রেটিং ৮.৫। রিলভিউস-এর জেমস বেরার্ডিনেলি বলেন, "এটা মনোযোগ দাবী করে, আমাদেরকে চিন্তা করতে বাধ্য করে, কেউই একে ফেলে দিতে পারে না। এসব কারণেই "আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ" কে আধুনিক সিনেমার একটি মাইলফলক হিসেবে স্বীকৃতি ইতে হবে।" নিউ ইয়র্ক টাইম্সের ভিনসেন্ট ক্যানবির মতে হররকে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপনের কারণে বিক্ষিপ্ত এই ছবিটি সফল মানবিক কমেডিতে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটা উষ্ণ ও ভালোবাসা উদ্রেক না করলেও পৃথিবী কোথায় দাড়িয়ে আছে তা ভালভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। তিনি একে অন্যতম সেরা অস্বাভাবিক ও সজ্জাবিহীন সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অপরদিকে বেশ কয়েকজন সমালোচক ছবির বেশ নেতিবাচক সমালোচনা করেছেন। রজার ইবার্ট এদের মধ্যে অন্যতম। তার মতে, "ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ একটি আদর্শগত বিশৃঙ্খলা, ভ্রমগ্রস্ত ডানপন্থী রূপকথা যা অরওয়েলীয় সতর্কবাণীর মুখোশ পরে থাকে"। অপর সমালোচক ডেভিড কার একে খারাপ সিনেমা আখ্যা দিয়ে বলেন, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে যে সুপ্ত ফ্রিড্রিশ নিচে বাস করে তার প্ররোচনাই এই ছবি ভাল লাগার কারণ। তার মতে, এ কারণেই ছবিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রতিক্রিয়া ও বিতর্কসেন্সরশিপ১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রে একে "এক্স" রেটিং দেয়া হয়। এ কারণে স্ট্যানলি কুবরিক স্বেচ্ছায় ছবি থেকে ৩০ সেকেন্ড কেটে বাদ দেন। এরপর ১৯৭৩ সালে পুনর্মুক্তির সময় একে "আর" রেটিং দেয়া হয়। United States Conference of Catholic Bishops' Office for Film and Broadcasting এই ছবিকে "সি" (নিষিদ্ধ) রেটিং দিয়েছে। তাদের এই রেটিং বলে, কোন ক্যাথলিকের এ সিনেমা দেখা উচিত হবে না। কারণ এতে উচ্চমাত্রার সহিংসতা ও অশ্লীল যৌনসংসর্গের সরাসরি দৃশ্য দেখানো হয়েছে। তবে ১৯৮২ সালে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এর বদলে "ও" রেটিং দেয়া হয় যার অর্থ নৈতিকভাবে ক্ষতিকর। যুক্তরাষ্ট্রে এর যৌনসংসর্গ ও ধর্ষণের দৃশ্যগুলো চূড়ান্ত নেতিবাচক বিবেচিত হয়। ১৯৭২ সালে ১৪ বছর বয়সী এক স্কুল ছাত্র তার বন্ধুকে হত্যার কারণে অভিযুক্ত হয়। বিচারের সময় তার এই ঘটনার সাথে আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ এর সম্পর্ক টানা হয়। পরবর্তীতে ১৬ বছরের আরেক ছেলের ক্ষেত্রে অনেকটা একই ধরনের ঘটনা ঘটে। এছাড়া এর একটি দৃশ্যে ধর্ষণের সময় ছেলেদেরকে "সিংইং ইন দ্য রেইন" গান গাইতে দেখা যায়। এই দৃশ্যটিও বিপুল সমালোচিত হয়। এই পরিস্থিতিতে কুবরিক নিজেই ওয়ার্নার ব্রাদার্স স্টুডিওকে যুক্তরাজ্য থেকে সিনেমার সরবরাহ উঠিয়ে নিতে অণুরোধ করেন। দীর্ঘ ২৭ বছর ব্রিটেনে এই ছবি পাওয়ার কোন উপায় ছিল না। কুবরিকের মৃত্যুর পরপর ডিভিডি প্রকাশিত হয়। সবাই ধারণা করতেন, উপর্যুক্ত কারণেই কুবরিক ওয়ার্নার ব্রাদার্সকে যুক্তরাজ্য থেকে সরবরাহ উঠিয়ে নিতে অণুরোধ করেছিলেন। কিন্তু কুবরিকের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত এক প্রামাণ্য চিত্রে তার স্ত্রী বলেন, এ কারণে নয় বরং কুবরিক ও তার পরিবারের উপর হত্যার হুমকি এসেছিল বলেই তিনি এমনটি করেছিলেন। প্রশংসাআ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ পরিচালনা, সম্পাদনা, সেরা ছবি ও অভিযোজিত চিত্রনাট্য- এই চারটি ক্ষেত্রে একাডেমি পুরস্কার মনোনয়ন লাভ করে। কিন্তু চারটিতেই দ্য ফ্রেঞ্চ কানেকশন-এর কাছে হেরে যায়। তাই এর কোন অস্কার পাওয়া হয়নি। সাতটি ক্ষেত্রে বাফটা পুরস্কার মনোনয়ন লাভ করে। ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে শিল্প নির্দেশনা (জন বেরি), চিত্রগ্রহণ (জন অ্যালকট), পরিচালনা (কুবরিক), ছবি, সম্পাদনা (উইলিয়াম বাটলার), চিত্রনাট্য (কুবরিক) এবং সাউন্ডট্র্যাক (ব্রায়ান ব্লেমি, জন জর্ডান ও বিল রো)। অ্যামেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট ১০০ বছরের মার্কিন চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সেরা নির্বাচন করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জকে সম্মানিত করে। এগুলো হচ্ছে:
টিকা
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগউইকিউক্তিতে আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ সম্পর্কিত উক্তির সংকলন রয়েছে।
|