আলবার্ট নেলসন হর্নবি (ইংরেজি: A. N. Hornby; জন্ম: ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৭ - মৃত্যু: ১৭ ডিসেম্বর, ১৯২৫) ল্যাঙ্কাশায়ারের ব্ল্যাকবার্ন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ ক্রীড়াব্যক্তিত্ব ছিলেন। উনবিংশ শতকের শেষদিকে ইংল্যান্ডের সুপরিচিত ক্রীড়াবিদ এ. এন. হর্নবি রাগবি ও ক্রিকেট - উভয় ক্রীড়াতেই তার সমান দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন।
দুইজন ব্যক্তির একজন হিসেবে দেশের পক্ষে রাগবি ও ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করে গেছেন। তবে, ১৮৮২ সালে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত টেস্টে ইংল্যান্ড দলেরঅধিনায়কত্ব করে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হন ও অ্যাশেজ প্রচলনের সাথে তার নাম জড়িয়ে যায়। এছাড়াও ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের পক্ষে ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করেছেন মাঙ্কি হর্নবি ডাকনামে পরিচিত এ. এন. হর্নবি।
প্রারম্ভিক জীবন
উইলিয়াম হেনরি হর্নবি'র ছয় সন্তানের অন্যতম ছিলেন তিনি। তার বাবা উইলিয়াম হর্নবি তুলা কারখানার স্বত্ত্বাধিকারী ও ল্যাঙ্কাশায়ার এন্ড ইয়র্কশায়ার রেলওয়ের পরিচালকসহ ১৮৫৭ থেকে ১৮৬৫ সময়কালে ব্ল্যাকবার্নের সংসদ সদস্য ছিলেন।
তার ভ্রাতৃদ্বয় এডওয়ার্ড ও হ্যারি যথাক্রমে ১৮৬৯ থেকে ১৮৭৪ এবং ১৮৮৬ থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও এডওয়ার্ড ও অন্য ভাই সেসিল প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
আলবার্ট হ্যারো স্কুলে অধ্যয়ন করেন। সেখান থেকে ফিরে এসে ল্যাঙ্কাশায়ারে অবস্থিত পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন।
হ্যারোতে অবস্থানকালে তার পরিবার ন্যান্টউইচের শ্রিউব্রিজ হল এলাকায় স্থানান্তরিত হন।
সম্মুখের পায়ের উপর ভর করে খেলতেন। ফিল্ডিংয়ে তার অসম্ভব দক্ষতা লক্ষ্য করা যায়। ১৮৭০ থেকে ১৮৮১ সময়কালে ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে সেঞ্চুরির সন্ধান পেয়েছেন। সাতবার তিনি এ সফলতা পান। ১৮৮১ সালে জাতীয় গড়ের শীর্ষে আরোহণ করেন। তিন সেঞ্চুরি সহযোগে ১,৫৩১ রান তুলেন তিনি।
কাউন্টি দলের সাফল্য টেস্ট অঙ্গনে ছড়াতে পারেননি হর্নবি। টেস্টে তার গড় ছিল মাত্র ৩.৫০।
টেস্ট ক্রিকেট
১৮৭৮-৭৯ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে। উভয় ইনিংসেই তিনি ফ্রেড স্পফোর্থের শিকারে পরিণত হয়। ১৮৮২ সালের পরবর্তী টেস্টেও এ ধারার পুণরাবৃত্তি ঘটে। ১৮৮২ সালের টেস্টটি লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় ইংরেজ দল সাত রানের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাভূত হয়। ফলশ্রুতিতে স্পোর্টিং টাইমস ইংরেজ ক্রিকেটকে ঘিরে স্মরণিকা বিদ্রুপাত্মক আকারে মুদ্রণ করে যে:
‘গভীর দুঃখের সাথে জানানো যাচ্ছে যে, ইংরেজ ক্রিকেট ২৯শে আগস্ট, ১৮৮২ তারিখে ওভালে দেহাবসান ঘটেছে। এর দেহ সমাহিত হবে ও ছাঁই অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে।’
এভাবেই ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা প্রতিপক্ষ হিসেবে অ্যাশেজের জন্ম হয়। এএন হর্নবি ইংল্যান্ডের পক্ষে আরও একটি টেস্টে নেতৃত্ব দেন যা তার সর্বশেষ ছিল। প্রতিবাদে সোচ্চার লর্ড হ্যারিস মাঠ থেকে চলে গেলে ১৮৮৪ সালের প্রথম টেস্টে অধিনায়কত্ব করেন তিনি। ১০ থেকে ১২ জুলাই, ১৯৮৪ তারিখে ওল্ড ট্রাফোর্ডে খেলাটি সম্পন্ন হয় ও ড্রয়ে পরিণত হয়। এবার হর্নবি স্পফোর্থকে মোকাবেলা করতে পারলেও ০ ও ৪ রান তুলেন।
১৮৭৮ থেকে ১৮৯৮ সাল পর্যন্ত ল্যাঙ্কাশায়ারের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন এএন হর্নবি। এছাড়াও ১৮৯৪ থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত ক্লাবটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ল্যাঙ্কাশায়ারের সভাপতি হিসেবে বল নিক্ষেপ বিতর্কে আর্থার মোল্ডের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।[২] এ. এন. হর্নবি ক্রমাগত আর্থার মোল্ডের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছেন। এর মূখ্য কারণ ছিল, ১৮৯০-এর দশকে অধিনায়কের দায়িত্বে থাকাকালে নিজ দলে তার ক্রীড়াসূলভ মনোভাবের সাথে তিনি সম্যক অবগত ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবন
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন তিনি। ১৮৭৬ সালে অ্যাডা সারাহ ইনগ্রামের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় তার। অ্যাডা ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্ত্বাধিকারী হার্বার্ট ইনগ্রাম, এমপি’র কন্যা ছিলেন। ন্যান্টউইচের চার্চ মিনশাল এলাকায় অ্যাডা বসবাস করতেন। হ্যারোয় এ দম্পতির চার পুত্রের সকলেই অবস্থান করে।
বোর যুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকায় জর্জ ভার্নন নিহত হন। ফ্রান্সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ওয়াল্টার ইনগ্রামের মৃত্যু ঘটে। সর্বকনিষ্ঠ সন্তান জন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আহত হয় ও মিলিটারি ক্রস প্রাপক হন। পরবর্তীতে কানাডার উত্তরাংশে বিস্ফোরণে নিহত হন।
জ্যেষ্ঠ সন্তান আলবার্ট হেনরি কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে পড়াশোনা করেন। বাবার ন্যায় তিনিও ল্যাঙ্কাশায়ারের অধিনায়কত্ব করেন। ১৮৯৯ থেকে ১৯১৪ সময়কালে ২৮৩ খেলায় অংশ নেন যা তার বাবার চেয়ে মাত্র নয়টি খেলা কম ছিল।
দেহাবসান
প্রথম রয়্যাল চেশায়ার মিলিশিয়ার ক্যাপ্টেন ছিলেন হর্নবি। ১৭ ডিসেম্বর, ১৯২৫ তারিখে ন্যান্টউইচের পার্কফিল্ড এলাকায় তার দেহাবসান ঘটে। অ্যাক্টনের কাছাকাছি সেন্ট মেরিজ চার্চে তাকে সমাহিত করা হয়।