জন এভারেট-হিথের মতে, হায়দ্রাবাদের অর্থ "হায়দারের শহর" বা "সিংহের শহর" যেখানে হায়দার (অর্থ সিংহ) এবং আবাদ (অর্থ শহর)। খলিফা আলী ইবনে আবু তালিবকে সম্মান জানাতে নামকরণ করা হয়েছিল, যিনি যুদ্ধে সিংহের মতো বীরত্বের কারণে হায়দার নামেও পরিচিত ছিলেন।[৫]ইসলামি স্থাপত্যের পণ্ডিত অ্যান্ড্রু পিটারসনের মতে, শহরটিকে আসলে বাগনগর (উদ্যানের শহর) বলা হত।[৬] একটি জনপ্রিয় তত্ত্ব থেকে জানা যায় যে নগরটির প্রতিষ্ঠাতা গোলকুন্ডা সালতানাতেরমুহাম্মদ কুলি কুতুব শাহ স্থানীয় নাচনেওয়ালী ভাগমতীর প্রেমে পড়েছিলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং হায়দার মহল উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। তার সম্মানে এই শহরটির নামকরণ করা হয় হায়দ্রাবাদ।[৭][৮][৯][১০]
একসময়ে অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী ছিলো হায়দ্রাবাদ শহর। কিন্তু পুরনো অন্ধ্র ভেঙ্গে এখন তৈরি হয়েছে নতুন রাজ্য তেলেঙ্গানা। আর রাজধানী হায়দ্রাবাদ পড়েছে তেলেঙ্গানার ভাগ্যে।
ভূগোল
হায়দ্রাবাদ ১,৫৬৬ কিলোমিটার (৯৭৩ মাইল) দিল্লির দক্ষিণে, মুম্বই এর ৬৯৯ কিলোমিটার (৪৩৪ মাইল) দক্ষিণপূর্বে [১১] এবং দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের তেলঙ্গানা রাজ্যতে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত।[১২]
আবহাওয়া
হায়দ্রাবাদের জলবায়ু ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু এবং শুষ্ক পাশাপাশি কিছু অংশে উষ্ণ আধা-শুষ্ক জলবায়ু।[১৩][১৪] বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৬.৬ °সে (৭৯.৯ °ফা); মাসিক গড় তাপমাত্রা ২১–৩৩ °সে (৭০–৯১ °ফা)।[১৫] গ্রীষ্মকাল (মার্চ-জুন) গরম এবং আর্দ্র, মাঝারি থেকে উচ্চতর গরমের সময় গড় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।[১৬] এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) প্রায়শই অতিক্রম করে।[১৫]
এই শহরের রাজনীতি এখনো নিজাম-শাসনে প্রভাবিত। শহরের একটি মাত্র লোকসভা আসন রয়েছে যা ১৯৮৪ সালের সাধারণ নির্বাচন থেকে সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন নামক রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় রয়েছে, যা এই দলের একমাত্র লোকসভা আসনও। এই আসনের অধীনে চারমিনার, চৌমহল্লা প্রাসাদ, মক্কা মসজিদ ও নিজামের অলংকার প্রাসাদের এলাকাগুলো রয়েছে। ১৯৮৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন সুলতান সালাউদ্দিন ওয়াইসি। তারপর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এর সংসদ সদস্য হন। সালাউদ্দিনের অপর পুত্র আকবরউদ্দিন ওয়াইসি এই আসনের অন্তর্গত বিধানসভা আসন চন্দ্রায়ণগুত্তা-র বিধায়ক। এই আসনের অন্তর্গত গোসামহল বিধায়ক আসনটি ব্যাতিক্রমে ভারতীয় জনতা পার্টির দখলে, যা দলের একমাত্র বিধানসভা আসনও।
অর্থনীতি
হায়দরাবাদের মহানগর অঞ্চলটির অর্থনীতির সাম্প্রতিক প্রাক্কলন $ ৪০ বিলিয়ন ডলার থেকে $৪ বিলিয়ন ডলার। এটি ভারতের সবচেয়ে উৎপাদনশীলতায় পঞ্চম বা ষষ্ঠ- মেট্রো অঞ্চল হিসাবে স্থান করে নিয়েছে।[২১]
হায়দরাবাদি রান্নায় রয়েছে চাল, গম ও মাংসের খাবারের বিস্তৃত ভাণ্ডার এবং বিভিন্ন মশালার দক্ষ ব্যবহার।[২৫] এই শহরের বিরিয়ানি বিশ্ববিখ্যাত হয়েছে [২৬] এবং জাতীয় ভৌগোলিক সূচক ট্যাগ বহন করে।[২৭] হায়দ্রাবাদী রান্না কিছুটা পারস্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়[২৮] শহরের শাসক নিজামদের হাত ধরে এই বিরিয়ানির চল শুরু হয়।
খেলাধুলা
ক্রিকেট এই শহরের জনপ্রিয় খেলা। রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম এ মূলত এর আসর বসে। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়াম অন্যতম ঐতিহাসিক স্টেডিয়াম। শহরের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত গান্টি মোহনা চন্দ্র বাল্যযোগী স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স রয়েছে যেখানে একটি অ্যাথলেটিক স্টেডিয়াম (ফুটবল এর জন্যে ), একটি ইনডোর স্টেডিয়াম (ব্যাডমিন্টন সহ ঘরোয়া খেলার জন্যে) এবং স্বর্ণন্ধ্র প্রদেশ ক্রীড়া কমপ্লেক্স (হকি খেলার জন্যে) রয়েছে। জিএমসি বালায়োগী ইন্ডোর স্টেডিয়ামটি ২০০৯ বিডব্লিউএফ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করে।
২০১৮ সালের হিসাবে, হায়দ্রাবাদ শহরে মাঝারি দূরত্বের পরিবহনের সর্বাধিক ব্যবহৃত মাধ্যমগুলির মধ্যে রয়েছে সরকারী মালিকানাধীন পরিষেবা, যেমন হালকা রেলপথ এবং বাসের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে চালিত ট্যাক্সি এবং অটোরিকশা অন্তর্ভুক্ত। এগুলি পুরোপুরি দৈনিক ৩.৫ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করে। নগরীর কেন্দ্রের মহাত্মা গান্ধী বাস স্টেশন থেকে ৩,৩০০ টি বাসের বহর ৩.৩ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে বাস পরিষেবা পরিচালিত হয়।[২৯][৩০]
বিমানবন্দর
হায়দ্রাবাদ বিমানবন্দর হলো শহরের একমাত্র পরিচালনাগত বিমানবন্দর। বিমানবন্দরের একটি যাত্রী টার্মিনাল, একটি কার্গো টার্মিনাল এবং দুটি রানওয়ে রয়েছে। আরজিআইএর একক যাত্রী টার্মিনালটি ১,০৫,৩০০ স্কয়ার ফুট (৯,৭৮০ বর্গ মিটার) জুড়ে রয়েছে এবং প্রতিবছর ১২ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা রয়েছে।[৩১] বিমান চালানর প্রশিক্ষণ সুবিধা, একটি জ্বালানী ভান্ডার, একটি সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র এবং দুটি এমআরও সুবিধা রয়েছে। ২০১৭ সালের হিসাবে, রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (আরজেআইএ) ভারতের যাত্রীবাহী বিমানবন্দরগুলির মধ্যে যাত্রী পরিবহনের হিসাবে ষষ্ঠ ব্যস্ততম বিমানবন্দর। বিমানবন্দরটি ২০১৭ সালে ১৭.১ মিলিয়ন যাত্রী বহন করে। এয়ার ইন্ডিয়া রিজিওনাল, ব্লু ডার্ক এভিয়েশন, স্পাইসজেট, লুফ্টহানজা কারগো, কুইকজেট কারগো এবং ট্রুজেট বিমান পরিচালনার কেন্দ্র হিসেবে এবং ইন্ডিগো ও এয়ার ইন্ডিয়া মনোনিবেশ শহর হিসেবে বিমানবন্দরটিকে ব্যবহার করে।
২০০৮ সালের হিসাবে বিমানবন্দরটি[৩২] বার্ষিক ১২ মিলিয়ন যাত্রী এবং ১,০০,০০০ টন পণ্যসম্ভার পরিচালনা করতে সক্ষম।[৩৩] ২০১১ সালে, একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও বিশ্বের বিমানবন্দরগুলিকে প্রতিনিধিত্বকারী এয়ারপোর্ট কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল, আরজিআইএকে ৫-১৫ মিলিয়ন যাত্রী বিভাগের বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর এবং পরিষেবা মানের জন্য বিশ্বের পঞ্চম-সেরা বিমানবন্দর হিসাবে বিচার করে।[৩৪]
মেট্রো
হায়দ্রাবাদ মেট্রো শহরের জন্য দ্রুতগতির রেল পরিষেবা প্রদান করে।[৩৫] এটা সম্পূর্ণরূপে সরকারি-বেসরকারী অংশীদারিত্ব (পিপিপি)-এর ভিত্তিতে বাস্তবায়িত,[৩৬] যেখানে রাজ্য সরকার স্বল্প অংশিদারীত্বে অংশগ্রহণ করে।[৩৭] মীয়াপুর থেকে নাগোলে পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে মোট ২৪টি স্টেশনের উদ্বোধন করেন ২৮ নভেম্বর ২০১৭ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।[৩৮][৩৯] এই মেট্রো ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারতের মধ্যে প্রথম কোন দ্রুত গনপরিবহনের জন্য মেট্রো পরিষেবা একই সঙ্গে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে যাত্রা শুরু করে।[৪০][৪১] এটি নির্মাণের জন্য ₹১৮,৮০০ কোটি টাকা (মার্কিন $২.৭ বিলিয়ন) ব্যয় করা হয়। ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় ৮০,০০০ যাত্রী প্রতিদিন হায়দ্রাবাদ মেট্রো ব্যবহার করে।[৪২]
এইচএমআর প্রকল্পটি নিউ ইয়র্কে ফেব্রুয়ারি-মার্চ ২০১৩ চলাকালীন নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিডারশিপ ফোরামের শীর্ষ ১০০ কৌশলগত গ্লোবাল অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি হিসাবে প্রদর্শিত হয়।[৪৩][৪৪]
এলঅ্যান্ডটি মেট্রো রেল হায়দরাবাদ লিমিটেডকে (এলটিএমআরএইচএল) 'স্ট্র্যাটেজিক এইচআর এবং ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিভাগে এসএপি এসি পুরস্কার প্রদান করা হয়।[৪৫]
↑The March of India (ইংরেজি ভাষায়)। Publications Division, Ministry of Information and Broadcasting। ১৯৫৯। পৃষ্ঠা ৮৯।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: তারিখ ও বছর (link)
↑গুগল (৬ জানুয়ারি ২০১৩)। "হায়দ্রাবাদ" (মানচিত্র)। গুগল ম্যাপস। গুগল। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৩।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)