ফারাহ খান (জন্ম: ৯ জানুয়ারি ১৯৬৫)[২] একজন ভারতীয় নৃত্য পরিকল্পনাকারী, চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেত্রী, টেলিভিশন উপস্থাপক। তিনি অসংখ্য বলিউড চলচ্চিত্রে তার নৃত্যপরিকল্পনার জন্য পরিচিত। তিনি ৮০টিরও বেশি হিন্দি চলচ্চিত্রের নৃত্যপরিকল্পনা করেছেন। এরপর থেকে তিনি একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও কাজ করছেন। সর্বোপরী, তিনি কিছু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র প্রকল্প যেমন, মেরি গোল্ড: অ্যান অ্যাডভেঞ্চার ইন ইন্ডিয়া, মনসুন ওয়েডিং এবং চাইনীজ চলচ্চিত্র পারহেপ্স লাভ-এ কাজ করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবন
ফারাহ খান ১৯৬৫ সালের ৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার মা মেনাকা চিত্রনাট্যকার হানি ইরানি এবং প্রাক্তন শিশু শিল্পী ডেইজী ইরানীর বোন।[৩] ফারাহ’র ভাই কমেডিয়ান, অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র পরিচালক সাজিদ খান। যখন তাদের মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়, তখন ফারাহ এবং সাজিদ দুইজন আলাদাভাবে বেড়ে উঠেন।[৪] চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ফারহান আখতার এবং জয়া আক্তার ফারাহ’র চাচাতো ভাই-বোন।
ফারাহ ম্যায় হুঁ না সিনেমার পরিচালক শিরীষ কুন্দরকে বিয়ে করেন,[৫] ২০০৪ সালের ৯ ডিসেম্বর। তারপর থেকে তারা পরস্পর একই চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন, যেমন, জান-ই-মান, ওম শান্তি ওম এবং তিস মার খান। ফারাহ খানের তিনজন জমজ সন্তান, এক ছেলে এবং দুই মেয়ে। তারা একসাথে ২০০৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন।[৬]
কর্মজীবন
ফারাহ মুম্বাইয়ের সেন্ট জাভিয়ার’স কলেজে সমাজতত্ত্ব নিয়ে পড়ালেখা করেন যখন মাইকেল জ্যাকসনেরথ্রিলার প্রচারিত হচ্ছিল। এরফলে তিনি প্রচুর উৎসাহ পান, যদিও তিনি এই গানের সাথে নাচতে পারতেন না এবং এটি তার জীবনের লক্ষ্য হয়ে উঠে। প্রধানত তিনি নিজ প্রচেষ্টায় নাচ শিখেন, এবং একটি নৃত্যদল গঠন করেন।[৪]
যখন নৃত্যপরিকল্পনাকারী সারোজ খানজো জিতা ওহি সিকান্দার সিনেমার কাজ ছেড়ে দেন, তখন ফারাহ সেই সিনেমার কাজটি হাতে তুলে নেন। এরপর তিনি আরো বহু গানের নৃত্যে কাজ করেন। তিনি কাভি হা কাভি না সিনেমায় কাজের সময় শাহরুখ খানের সাথে পরিচিত হন এবং এরপর তারা অনেক ভাল বন্ধু হয়ে উঠেন এবং তারা একসাথে কাজ শুরু করেন।[৭]
মনসুন ওয়েডিং, ভ্যানিটি ফেয়ার এবং বম্বে ড্রীমস সিনেমায় ফারাহ খানের কাজ ২০০৪ সালের টনি পুরস্কার অনুষ্ঠানে টনি সেরা নৃত্য পরিকল্পনাকারী পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। বম্বে ড্রীমস সিনেমায় তিনি আন্থনী ভান লাস্টের সাথে যৌথভাবে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। তিনি পাঁচবার ফিল্মফেয়ার সেরা নৃত্যপরিকল্পনাকারী পুরস্কার জিতেছেন। রেড চিলি ইন্টারটেইনমেন্ট প্রযোজিত ফারাহ খানে প্রথম পরিচালিত সিনেমা ম্যায় হুঁ না। তিনি দ্বিতীয় নারী পরিচালক হিসেবে ফিল্মফেয়ার সেরা পরিচালক পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। পরিচালক হিসেবে তার দ্বিতীয় সিনেমা হল, ওম শান্তি ওম, যা মুক্তির পর সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা।[৮]তিস মার খান তার পরিচালিত পরবর্তী মুক্তপ্রাপ্ত সিনেমা। ২০১২ সালে, তিনি বেলা বাংশালী সেহ্গাল পরিচালিত শিরি ফারহাদ কি তো নিকাল পাড়ি সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অপভিনয়ের মাধ্যমে তিনি প্রধান অভনেত্রী হিসেবে অভিষেক করেন।
ফারাহ খান ২০০৫ সালে হ্যাপি নিউ ইয়ার সিনেমা পরিচালনা করার পরিকল্পনা ঘোষণা করে,[৯] বহু বছর ধরে বিভিন্ন কারণে এই সিনেমার নির্মানকাজ পিছিয়ে যায়।[১০][১১][১২][১৩][১৪][১৫][১৬][১৭][১৮][১৯][২০] ২০১২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই সিনেমার নির্মানকাজ পুনরায় শুরু হয়।[২১]
২০০৬ সালের ৩১ আগস্টে এমটিভি ভিডিও মিউজিক পুরস্কারের জন্য তিনি কলম্বিয়ার পপ স্টার শাকিরারহিপ্স ডোন্ট লায় গানের বলিউড ভার্সনের জন্য ফারাহ প্রশিক্ষণগ্রহণ করেন।[২২] এছাড়া ফারাহ ২০০৯ সালের ব্লু সিনেমায় চিজ্ঞি উইজ্ঞি গানের জন্য কাইলি মিনোগো নৃত্যপরিকল্পনা করেন।
তিনি তারকা আলাপ অনুষ্ঠান তেরে মেরে বিচ ম্যায় এর উপস্থাপক এবং টেলিভিশন গানের প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান ইন্ডিয়ান আইডল ১ এবং ২, জো জিতা ও সুপারস্টার, এন্টারটেইমেন্ট কে লিয়ে কুচ বি কারেগা এবং ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স লি’ল মাস্টারস এর বিচারক থাকেন। এছাড়া তিনি স্টারপ্লাস চ্যানেলে প্রচারিত নাচের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান জাস্ট ডান্স এ ঋত্বিক রোশন এবং ভাইভাবী মার্চান্ট এর পাশাপাশি সাথে বিচারক থাকেন।
ফারাহ এবং তার স্বামী যৌথভাবে তাদের তিন জমজ সন্তানের সম্মানার্থে থি’স কোম্পানী নামে একটি চলচ্চিত্র চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। ২০১২ সালে তিনি স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার সিনেমার ইস্ক ওয়ালা লাভ এবং রাধ’আ গানের নৃত্যপরিকল্পনা করেন। ২০১৩ সালে তিনি জাম্পিং ঝাপাক এর নৃত্যপরিকল্পনা করেন।
গান "মুন্নি বাদনাম" বিজয়ী – স্ক্রিন সেরা নৃত্যপরিকল্পনাকারী পুরস্কার বিজয়ী – আইফা সেরা নৃত্যপরিকল্পনাকারী পুরস্কার বিজয়ী – গ্লোবান ইন্ডিয়ান ফিল্ম এন্ড টিভি অনার্স সেরা নৃত্যপরিকল্পনাকারী পুরস্কার
গান "শিলা কি জাওয়ানী" বিজয়ী - ফিল্মফেয়ার সেরা নৃত্যপরিকল্পনাকারী পুরস্কার বিজয়ী – গ্লোবান ইন্ডিয়ান ফিল্ম এন্ড টিভি অনার্স সেরা নৃত্যপরিকল্পনাকারী পুরস্কার বিজয়ী – জি সিনে সেরা নৃত্যপরিকল্পনাকারী পুরস্কার
২০১১
দিল্লি বেল্লি
গান "জা চুড়াইল", বিজয়ী – গ্লোবান ইন্ডিয়ান ফিল্ম এন্ড টিভি অনার্স সেরা নৃত্যপরিকল্পনাকারী পুরস্কার
ফারাহ খান তার নৃত্যপরিকল্পনার জন্য বহু পুরস্কার অর্জন করেছেন, যার মধ্যে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অন্যতম।[২৩]
ফিল্মফেয়ার পুরস্কার
তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ছয়বার জিতেছেনঃ ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০১, ২০০২, ২০০৪ এবং ২০১১ সালে। তিনি নৃত্যপরিকল্পনাকারী বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জয়ী, সর্বোচ্চ পুরস্কার জয়ী হলেন সারোজ খান।