মিঠুন চক্রবর্তী
মিঠুন চক্রবর্তী (জন্ম: গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী[৪] ; ১৬ জুন ১৯৫০) একজন ভারতীয় অভিনেতা, প্রযোজক এবং রাজনীতিবিদ। যিনি প্রধানত হিন্দি এবং বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। তিনি রাজ্যসভার প্রাক্তন সংসদ সদস্য ।[৫][৬] তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রাপক । ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, তিনি ভারত সরকার কর্তৃক তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণে ভূষিত হন।[৭][৮] এবং ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর এ ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের সর্বোচ্চ সম্মান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে সম্মানিত হন। মিঠুন চক্রবর্তী আর্ট হাউস নাট্য মৃগয়া (১৯৭৬) দিয়ে তার অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন, যার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য তার প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন ।[৯] ১৯৮২ সালের ডিস্কো ড্যান্সার চলচ্চিত্রে জিমির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, যা ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের বক্স অফিসে একটি বড় সাফল্য ছিল ।[১০] তিনি সুরক্ষা, হাম পাঁচ, সহস, ওয়ারদাত, শৌকিন, ওয়ান্টেড, বক্সার, কসম প্যাদা করনে ওয়ালে কি, পেয়ার ঝুকতা না, গুলামি, দিলওয়ারসি, শেওয়ালা, সোয়ালা আন্ডার, অবিনাশ, ডান্স ডান্স, ওয়াতন কে রাখালে, পেয়ার কা মন্দির, ওয়াক্ত কি আওয়াজ, প্রেম প্রতিজ্ঞা, দাতা, মুজরিম, অগ্নিপথ, রাবন রাজ এবং জল্লাদ - এর মতো ছবিতে অভিনয়ের জন্য স্মরণীয়। ১৯৯০ - এর দশকের শেষের দিকে এবং ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে পতনের পর, তিনি গুরু, গোলমাল ৩, হাউসফুল ২, ওএমজি - ওহ মাই গড!, খিলাড়ি ৭৮৬, কিক, দ্য তাশখন্দ ফাইলস এবং দ্য কাশ্মীর ফাইলস চলচ্চিত্রের অভিনয় করেন। ১৯৯১ সালে, তিনি অগ্নিপথ চলচ্চিত্রে কৃষ্ণান আইয়ার নারিয়াল পানিওয়ালার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিলেন।[৪] পরে তিনি তাহাদের কথা (১৯৯২) এবং স্বামী বিবেকানন্দ (১৯৯৮) ছবিতে অভিনয়ের জন্য আরও দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন ।[৪][১১] তিনি বাংলা, হিন্দি, ওড়িয়া, ভোজপুরি, তামিল, তেলুগু, কন্নড় এবং পাঞ্জাবি ছবি সহ ৩৫০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন । তিনি লিম্কা বুক অফ রেকর্ডসে ১৯৮৯ সালে প্রধান অভিনেতা হিসাবে ১৯টি চলচ্চিত্র মুক্তির রেকর্ডধারী।[৪][১২][১৩] মিঠুন চক্রবর্তী মোনার্ক গ্রুপের মালিক, প্রতিষ্ঠানটির আতিথেয়তা এবং শিক্ষা খাতে আগ্রহ রয়েছে।[১৪][১৫] তিনি প্রোডাকশন হাউস পাপারাত্জি প্রোডাকশনও শুরু করেছেন।[১৬] ১৯৯২ সালে তিনি দিলীপ কুমার এবং সুনীল দত্তের সাথে সিনে অ্যান্ড টিভি আর্টিস্টস অ্যাসোসিয়েশন নামে অভাবী অভিনেতাদের সাহায্য করার জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করেন।[১৭] তিনি ছিলেন ফিল্ম স্টুডিও সেটিং অ্যান্ড অ্যালাইড মজদুর ইউনিয়নের চেয়ারপার্সন, যেটি সিনেমা কর্মীদের কল্যাণের যত্ন নেয় এবং তাদের দাবি ও সমস্যার সমাধান করে। টেলিভিশন অনুষ্ঠান ড্যান্স ইন্ডিয়া ড্যান্স যেখানে চক্রবর্তী গ্র্যান্ড মাস্টার ইতিমধ্যেই লিম্কা বুক অব রেকর্ডস এবং গিনেস বিশ্ব রেকর্ডে প্রবেশ করেছে ।[১৮][১৯] তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০১২ সালের ভারতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থনে প্রণব মুখোপাধ্যায় জয়ী হয়েছিলেন ।[২০] তিনি ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০২১ সালের ৭ মার্চ ভরতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেন ।[২১] শৈশবকাল ও শিক্ষাজীবনগৌরাঙ্গ চক্রবর্তী বাংলাদেশের বাঙালি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বসন্তকুমার চক্রবর্তী এবং মাতার নাম শান্তিরাণী চক্রবর্তী। তাঁর শৈশব ও বাল্য বয়স কাটে তার কাকা কাকিমার কাছে নদীয়া জেলার শান্তিপুর এ। শান্তিপুর ওরিয়েন্টাল অ্যাকাডেমি স্কুলে ভর্তি হন এবং ওই স্কুল থেকেই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়াও ফিল্ম অ্যাণ্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইণ্ডিয়া (এফটিআইআই) থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন তিনি।[২২] চলচ্চিত্র জগৎতিনি জনপ্রিয় পরিচালক মৃণাল সেনের পরিচালনায় মৃগয়া চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপালী জগতে প্রবেশ করেন। অসামান্য অভিনয় নৈপুণ্যের জন্য এ ছবির মাধ্যমে তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। অভিষেকের পর তিনি দো আনজানে (১৯৭৬) এবং ফুল খিলে হ্যায় গুলশান গুলশান (১৯৭৭) ছবি দু'টোয় সহ-চরিত্রে অভিনয় করেন। কিন্তু তাতে তিনি কোন গুরুত্ব ও সফলতা পাননি। অভিনীত চলচ্চিত্রসমূহ
ব্যক্তিগত জীবনভারতের সাবেক অভিনেত্রী যোগীতা বালীকে নিয়ে ঘর-সংসার করেন মিঠুন চক্রবর্তী। তাদের ঘরে তিন পুত্র এবং এক কন্যা রয়েছে। জ্যেষ্ঠ পুত্র মিমোহ চক্রবর্তী বলিউডের অভিনেতা। ২০০৮ সালের 'জিমি' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার অভিষেক ঘটে। ২য় পুত্র রিমোহ চক্রবর্তী মিঠুনের পরিচালনায় ফির কাভি (আবার কখনো) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অংশ নেয়। অন্য দুই সন্তান - নমসী চক্রবর্তী এবং দিশানী চক্রবর্তী এখনো পড়াশোনায় ব্যস্ত রয়েছে। অনেকগুলো সূত্র দাবী করে যে, মিঠুন চক্রবর্তী দক্ষিণ ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শ্রীদেবী'র সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে এ সম্পর্ক বজায় ছিল যা শ্রীদেবী পরবর্তীতে সম্পর্ক ছেদ করেন। এর প্রধান কারণ ছিল - প্রথম স্ত্রী যোগীতা বালীকে মিঠুন কর্তৃক বিবাহ-বিচ্ছেদ না ঘটায়। তারা অত্যন্ত গোপনে বিয়ে করেছিলেন বলে জানা যায়, যদিও তা পরবর্তীতে অস্বীকার করা হয়।[২৪] ক্রীড়া জগৎমিঠুন চক্রবর্তী রয়েল বেঙ্গল টাইগার্স দলের সহ-স্বত্ত্বাধিকারী ছিলেন। পরবর্তীতে দলটি ভারতীয় ক্রিকেট লীগে আর অংশগ্রহণ করেনি ও পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়।[২৫] পুরস্কার
ফিল্মফেয়ার পুরস্কার
আরো দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগউইকিমিডিয়া কমন্সে মিঠুন চক্রবর্তী সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। উইকিউক্তিতে মিঠুন চক্রবর্তী সম্পর্কিত উক্তির সংকলন রয়েছে।
|