বতসোয়ানা
বতসোয়ানা (ইংরেজি: Botswana, টেমপ্লেট:Lang-tn; /bɒtˈswɑːnə/ ( ), also ইউকে: /bʊt-, দেশটিতে ২ দশমিক ৩ মিলিয়নের কিছু বেশি মানুষ বসবাস করে। জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৬ ভাগ মানুষ বাস করে দেশটির রাজধানী ও সবচেয়ে বৃহত্তম শহর গাবোরোন-এ। এটি অতীতে পৃথিবীর সবচাইতে দরিদ্র দেশগুলোর একটা ছিল। ষাটের দশকের শেষে দেশটির মাথাপিছু আয় ছিল সত্তর আমেরিকান ডলারের কাছাকাছি পরিমাণ।[৭] পরবর্তীতে এটি পৃথিবীর মাঝে দ্রুতগতির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একটি দেশে পরিণত হয় এবং নিজেদের উচ্চমধ্যম আয়ের একটি দেশে পরিণত করে ফেলে। ২০০,০০০ বছর আগে এই অঞ্চলে প্রথম মানুষ বসবাস করতে শুরু করে। সোয়ানা জাতির মানুষেরা মূলত বান্টু সম্প্রসারণ -ভাষাভাষী মানুষের বংশধর, যারা বহু আগে আফ্রিকার দক্ষিণ অংশে বতসোয়ানায় বাস করতে শুরু করে। তাঁরা খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ সালের দিকে কৃষক ও মেষপালক হিসেবে বাস করবার জন্য এই অঞ্চলকে বেছে নিয়েছিল। ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশ শাসনের ভেতরে একে নিয়ে আসা হয়, তবে একে বেচুয়ানাল্যান্ড নাম দিয়ে স্বায়ত্ত্বশাসনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬ সালে ব্রিটিশ শাসন শেষ হবার পর এর বর্তমান নামে একে একটি স্বাধীন কমনওয়েলথ রাস্ট্রে পরিণত করা হয়[৮]। সেই সময় থেকেই এটি একটি গণপ্রজাতন্ত্রী দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছে এবং অন্তত ১৯৯৮ সাল থেকে আফ্রিকার ভেতরে দুর্নীতিতে সবচাইতে নিচের পর্যায়ে আছে।[৯] এর অর্থনীতি খনি, মেষপালন ও পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, বতসোয়ানার পার ক্যাপিটা জিডিপি ১৮,১১৩ ডলার (আমেরিকান), আফ্রিকার ভেতর সবচাইতে বেশি জিডিপির একটি দেশ[১০]। এর তুলনামূলক বেশি মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় (কারো কারো মতে আফ্রিকার ভেতরে চতুর্থ) দেশের মানুষকে উন্নত জীবনযাপন সুবিধা প্রদান করেছে। সাহারার দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলির ভেতর এটি সার্বিক জীবনযাত্রার দিক থেকে সবচেয়ে উপরে অবস্থান করছে।[১১] বতসোয়ানা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদস্য যেমন - আফ্রিকান ইউনিয়ন, সাউদারন আফ্রিকান কাস্টমস ইউনিয়ন, সাউদারন আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি, দা কমনওয়েলথ অব নেশনস এবং জাতিসংঘ। এইচআইভি/এইডস দ্বারা দেশটি যথেষ্ট আক্রান্ত হয়েছিল। এর বিরুদ্ধ্বে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হলেও ২০০৫ থেকে ২০১৩ সালে দেশটিতে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ২৯০,০০০ থেকে ৩২০,০০০ এ উন্নিত হয়।[১২] ২০১৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বতসোয়ানা এইডস সংক্রমণের দিক দিয়ে পৃথিবীতে তৃতীয় স্থানে আছে, জনসংখ্যার ২০ ভাগ এতে আক্রান্ত থাকার কারণে। বুৎপত্তিদেশটির নামের অর্থ "সোয়ানাদের দেশ", এই দেশের প্রধান জাতিসত্তার নাম অনুযায়ী।[১০] বতসোয়ানা - শব্দটি সোয়ানাদেরকেই ইঙ্গিত করে।[১৩] কিন্তু বর্তমানে এটি বতসোয়ানায় বসবাসকারী সকল নাগরিকদেরই বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।[১৪] অনেক ইংরেজী ডিকশনারীতে বতসোয়ানার মানুষদের বোঝাতে বতসোয়ানান শব্দটি ব্যবহার করে। ইতিহাসপ্রত্নতত্ত্ববিদদের খননকার্য অনুযায়ী, এখানে দুই মিলিয়ন বছর ধরে মানুষ বা মানুষের পূর্ব-পুরুষেরা বাস করত। পাথরের তৈরি বিভিন্ন বস্তু ও প্রাণিকুলের অস্তিত্ব দেখে বোঝা যায়, ৪০০,০০০ বছর পূর্বে এর প্রায় সমগ্র অংশেই প্রাণীদের বসবাস ছিল।[১৫] ২০১৯ সালের অক্টোবরে গবেষকরা প্রকাশ করেন যে, আধুনিক মানুষের জন্মস্থান ২০০,০০০ সালে বতসোয়ানাতেই ছিল।[১৬][১৭] আধুনিক মানুষের দ্বারা তৈরি গুহাচিত্র এখানে পাওয়া গেছে যার বয়ন ৭৩,০০০ বছর।[১৮] আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের আসল অধিবাসী ছিল বুশম্যান (সান) ও খোয়ী জাতের মানুষেরা। দুই দলই খোয়িসান ভাষায় কথা বলত এবং শিকার করতে, অনুষ্ঠান করতে আর ব্যবসা করতে দূর হতে দূরে যেত। ২০০০ বছর পূর্বে যখন গবাদীপশুর পাল পালন সম্পর্কে মানুষ প্রথম এখানে জানতে শুরু করল, পশুপালন এখানকার অর্থনীতির এক প্রধান অংশে পরিণত হল, কেননা এখানকার বেশিরভাগ চারণভূমি ছিল সিসি মাছির প্রভাবমুক্ত।[১৯] আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ শতক বলে ধরে নিলেও বান্টু ভাষাভাষী মানুষেরা উত্তরের এলাকা থেকে কখন প্রথম এ এলাকায় পা রেখেছিল তা এখনও অস্পষ্ট। সেসময় এই দেশের উত্তর পূর্বে বর্তমান কালাঙ্গা জাতির মানুষের পূর্বপুরুষেরা বাস করতে শুরু করে। তাঁরা জিম্বাবুয়ে এবং মাপুনগুবুয়ে রাজ্যের সাথে সংযুক্ত ছিল, যার একটি দৃশ্যমান নিদর্শন হচ্ছে দোম্বশাবা ধ্বংসাবশেষ, যা বতসোয়ানার এক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী অংশ। এই নিদর্শনটি বৃহত্তর জিম্বাবুয়ের অংশ (১২৫০-১৪৫০ খ্রিস্টাব্দ) যাতে গড়পড়তা ১ দশমিক ৮ মিটারের দেয়াল রয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষজনের জন্যে এটি একটি সম্মানিত এলাকা আর তাঁরা বিশ্বাস করেন, এখানকার পাহাড়ের ওপর তাঁদের জাতিপ্রধান নিজের সহকারীদের সাথে বসবাস করতেন। এই অঞ্চলগুলো বর্তমান বতসোয়ানার সীমানার বাইরে অবস্থান করছে যেখানে বিপুল পরিমাণে গবাদিপশুর পাল থাকত। এই গবাদিপশুর পাল রাখার বর্তমান অবস্থান চলে এসেছে দেশটির মাঝখান অঞ্চলে। গবাদীপশুর পালের বর্তমান সংখ্যা আর সে আমলের সংখ্যা প্রায় কাছাকাছিই ছিল।[২০] মাপুনগুবুয়ে রাজ্যের নিম্নগামী সময় পর্যন্ত, মোটামুটি ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই গবাদীপশু পালনের অঞ্চলটির প্রসার ঘটেছিল। এই সময়েই বাকগালাগাদী, প্রথম সোয়ানা ভাষাভাষী জাতি কালাহারি মরুভূমির দক্ষিণ অঞ্চলে প্রবেশ করে। এই বিভিন্ন গোত্রের মানুষেরা ব্যবসায়িক পথের দ্বারা একে অন্যের সাথে সংযুক্ত ছিল যা লিমপোপো নদীর মাধ্যমে ভারত মহাসাগরের সাথে যোগ হয়েছিল। তাঁরা এশিয়ার থেকে বিভিন্ন দ্রব্য যেমন পুতি আমদানী করত, বিনিময়ে তাঁরা দিত সোনা, আইভরি আর গন্ডারের শিং।[২১] লৌহযুগের টটসোয়েমোগালা পাহাড়ের স্থাপনাগুলো ৭০০ থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত এই এলাকায় হাজার বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন পেশার প্রসারণের প্রমাণ দেয়। এই পাহাড়টি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাথমিক রাজ্যগুলোর গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে, যেখানে গবাদিপশু পালন ছিল অর্থনীতির প্রধান অংশ। টটসুয়ে স্থাপনার ভেতরে বাড়ীঘর, গবাদীপশুর থাকার জায়গা আর কবর দেয়ার জায়গা পাওয়া যায়, যার বাইরের অংশগুলো ছিল পাথরের তৈরি। এখানে সেন্টাউরস সিলারাস নামের ঘাস উৎপাদনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যা দক্ষিণ ও মধ্যবর্তী আফ্রিকায় গবাদীপশু পালনে কাজে লাগত। ৭০০ শতকের দিকে টটসোয়ে জাতির মানুষেরা বতসোয়ানার পশ্চিমে বাস করা শুরু করে এবং ভুট্টা ও মিলেট জাতীয় খাদ্যশস্য সংবলিত এক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার প্রচলন শুরু করে।[২২] এই অঞ্চলটি আসলে পূর্ব বতসোয়ানা কেন্দ্রিক আরো বড় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের অংশ আর এই অঞ্চলের আরো অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকার সাথে সদৃশ, এমনকি চিনামাটির উৎপাদন ও বসবাসের সময়ের সাথেও মিলে যায় বিভিন্নভাবে।[২২] এছাড়াও, টটসোয়েমোগালা পাহাড়ের আরো অন্য পেশার ওপরও কৃষিকার্য অনেক ভূমিকা রাখে, কারণ এখানে অনেক শস্যভান্ডারের খোঁজও পাওয়া গিয়েছে। এমনকি ভিন্ন ভিন্ন স্তরের বাড়ীঘর খুঁজে পাওয়াতে বোঝা যায় শত বছর ধরে এখানে আরো অন্যান্য পেশার মানুষেরও বিচরণ ছিল। পুরোপুরি সঠিকভাবে এই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণকারী সোয়ানা ভাষাভাষী মানুষদের আগমনের সময়টি এখনও নির্দিষ্টভাবে বের করা যায়নি। বাকওয়েনা গোত্রের সদস্যরা, যাদের নেতৃত্বে কেগাবো ২ নামে একজন অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন, তাঁরা ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে ভেতরে দক্ষিণ কালাহারিতে প্রবেশ করেন। এরা বাকগালাগাদি গোত্রের মানুষদের মরুভূমির পশ্চিমে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তী বছরগুলতে বাকওয়েনা গোত্রেরই দূর সম্পর্কিত সদস্যরা আশেপাশের অঞ্চলে অবস্থান নেয়া শুরু করে। বাংওয়াকেটসে গোত্রের মানুষেরা পশ্চিমে অবস্থান নেয়, অন্যদিকে বাংওয়াতো গোত্রের মানুষেরা পূর্বের কালাংগা অঞ্চল, যা উত্তরপূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত, সেখানে অবস্থান নেয়।[২৩] এর কিছুদিনের ভেতরেই বাংওয়াতোর শাখা গোত্র বাতাওয়ানা ওকাভাংগো ডেলটা অঞ্চলে অবস্থান গ্রহণ করে, সম্ভবত ১৭৯০ দশকের দিকে।[২৪] এমফেকেইন ও বতসোয়ান-বোয়ার যুদ্ধের ফলাফলআধুনিক বতসোয়ানা সম্পর্কে প্রথম লিখিত দলিল পাওয়া যায় ১৮২৪ সালের। এই দলিল অনুযায়ী, বাংওয়াকেটসে গোত্র এই অঞ্চলের প্রভাবশালী গোত্র হিসেবে অবস্থান করছিল। মাকাবে - ২ নেতার অধীনে এই গোত্র মরুভূমি অঞ্চলের ভেতর বিশাল গবাদীপশুর পাল নিরাপত্তার সাথে পালন করছিল আর তাঁদের সামরিক বাহিনী দ্বারা আশেপাশের অঞ্চলেও প্রভাব বিস্তার করছিল।[২৫] অন্যান্য গোত্রপ্রধানরাও ে অঞ্চলে বেশ উন্নতি করছিল।[২৬] এই অবস্থার সমাপ্তি ঘটে যখন এমফেকেইন আমলে (১৮২৩-১৮৪৩) দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একদল অনুপ্রবেশকারী এখানে দখল কায়েম করতে সফল হয়। যদিও বাংওয়াকেটসে গোত্রের সদস্যরা বাকোলোলো গোত্রের সদস্যদের ১৮২৬ সালে পরাজিত করতে সমর্থ হয়, এরপরেও পরবর্তীতে সব গোত্রপ্রধানেরাই আক্রমণের শিকার হয়ে পারাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়। বাকোলোলো এবং আমাএন্ডেবেলে বার বার আক্রমণ করে এবং বিপুল পরিমাণে গবাদীপশু, নারী ও শিশুকে নিয়ে যায়। যাদের অনেকেই পরবর্তীতে মরুভূমির পাহাড় ও গুহায় আশ্রয় নেয়। ১৮৪৩ সালের পরেই, যখন আমাএন্ডেবেলে গোত্র পশ্চিম জিম্বাবুয়েতে অবস্থান গ্রহণ করে, এই হুমকী পুরোপুরি দূর হয়।[২৭] রাজনীতিপ্রশাসনিক অঞ্চলসমূহভূগোলএটি একটি সমতল ভূমি, যার শতকরা ৭০ ভাগ জুড়ে আছে কালাহারি মরুভূমি়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে দক্ষিণ আফ্রিকা, পূর্ব ও উত্তর দিকে নামিবিয়া, ও উত্তরপূর্ব দিকে জিম্বাবুয়ে আছে এই দেশের। এটি জাম্বিয়া দেশের সাথেও যুক্ত জাম্বেজি নদীর সীমান্ত দ্বারা, মাঝখানে আছে কানযুগুলা সেতু। অর্থনীতিজনসংখ্যাসংস্কৃতিআরও দেখুনতথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
|