সিয়েরা লিওন
সিয়েরা লিওন (/sɪˈɛərə সিয়েরা লিওনে প্রায় ১৬টি জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে, যাদের প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা ভাষা ও রীতিনীতি। দুটি বৃহত্তম ও সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতিগোষ্ঠী হল তেমনে ও মেন্দে। তেমনে জাতিগোষ্ঠীকে দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রাধান্য করতে দেখা যায়, যখন মেন্দেরা দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে তাদের কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে। যদিও দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে সরকারি প্রশাসন ও বিদ্যালয়সমূহে ইংরেজিতে কথা বলা হয়, তবুও দেশে এবং দেশের সকল বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ক্রিও ভাষা সবচেয়ে বেশি কথ্য ভাষা। বিশেষ করে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য এবং একে অপরের সাথে সামাজিক যোগাযোগে ক্রিও ভাষা ব্যবহার করে। সিয়েরা লিওন একটি নামমাত্র মুসলিম দেশ,[৮][৯] যদিও খ্রিস্টান সংখ্যালঘুরা যথেষ্ট প্রভাবশালী। সাধারণভাবে দেশের মোট জনসংখ্যার ৬০% মুসলিম, ৩০% আদিবাসী বিশ্বাসী এবং ১০% খ্রিস্টান ধর্মীয়।[১০] যাহোক, সেখানে আদিবাসী বিশ্বাসের সংগঠিত ধর্মীয় সামঞ্জস্যতা অধিক। সিয়েরা লিওনকে বিশ্বের সবচেয়ে ধর্মীয় সহিষঞ্চু জাতি হিসাবে গণ্য করা হয়। মুসলিম ও খ্রিস্টানরা একে অপরের প্রতি সহযোগী ও শান্তিপূর্ণ আচরণ করে। সিয়েরা লিওনে ধর্মীয় সহিংসতা খুবই বিরল। সিয়েরা লিওন খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে হীরা, এটি অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। এছাড়াও রয়েছে অন্যতম পণ্য টাইটানিয়াম ও বক্সাইট, অন্যতম প্রধান পণ্য সোনা, এবং রয়েছে রুটাইল এর পৃথিবীর বৃহত্তম মজুদের একটি অংশ। সিয়েরা লিওনে রয়েছে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক হারবর। এত প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার পরেও সিয়েরা লিওনের ৭০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমায় বসবাস করে।[১১] সিয়েরা লিওন ১৯৬১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে। সরকারের দুর্নীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের অব্যবস্থাপনার ফলে সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধ হয় (১৯৯১ - ২০০২), যার জন্য এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশে ধংসযজ্ঞ চলে। এ যুদ্ধে ৫০,০০০ বেশি মানুষ মারা যায়, দেশের অবকাঠামো প্রায় ধ্বংস করে, এবং দুই মিলিয়ন মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরণার্থী হিসাবে বাস্তুহারা হয়। সাম্প্রতি ২০১৪ এবোলা প্রাদুর্ভাব সিয়েরা লিওনের দুর্বল স্বাস্থ্য সেবা কাঠামোর উপর জটিলতা সৃষ্টি করে, চিকিৎসা খাতে অবহেলিত মনোভাবের কারণে আরও অনেক মৃত্যু ঘটে। এটি একটি মানবিক সংকট সৃষ্টি করে এবং দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও ব্যাহত করে। দেশের গড় আয়ু ৫৭.৮ বছর, যা অত্যন্ত কম।[১০] সিয়েরা লিওন জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন, ওআইসি, ইকোওয়াস, কমনওয়েলথ সহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। ইতিহাসরাজনীতিপ্রশাসনিক অঞ্চলসমূহসিয়েরা লিওনে মোট চারটি প্রদেশ রয়েছে, এগুলো হল- উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ, দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ, পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ । এর মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশকে দুটি জেলায় এবং বাকি প্রদেশগুলোকে ১২ টি জেলায় ভাগ করে মোট ১৪ টি জেলা নিয়ে প্রশাসনিক অঞ্চল নির্ধারণ করা হয়েছে ।
অর্থনীতি১৯৯০ সালের পর থেকে সিয়েরা লিওনের অর্থনীতি পড়তির দিকে চলতে থাকে । বিশেষ করে ১৯৯০ এর পর থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধে এর অর্থনৈতিক অবকাঠামো সম্পূর্ণ রূপে ভেঙ্গে পড়ে । গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে সিয়েরা লিওনের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে । কিন্তু এসব কিছুই নির্ভর করছে সরকারের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ নীতির উপরে, কেননা অনেকেই ধারণা করেন যে এই গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে সরকারের দুর্নীতি অনেক বড় একটা নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছিল । সিয়েরা লিওনের মুদ্রার নাম লিওন। জাতীয় ব্যাংকের নাম ব্যাংক অফ সিয়েরা লিওন। সিয়েরা লিওন একটি কৃষি ভিত্তিক দেশ। দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৫৮ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রধান শস্য পণ্য হল ধান, প্রায় ৮৫ শতাংশ কৃষক ধান চাষ করেন। দেশে বছরে জনপ্রতি ৭৬ কেজি ধান খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। সিয়েরা লিওন খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে হীরা, এটি অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। এছাড়াও রয়েছে অন্যতম পণ্য টাইটানিয়াম ও বক্সাইট, অন্যতম প্রধান পণ্য সোনা, এবং রয়েছে রুটাইল এর পৃথিবীর বৃহত্তম মজুদের একটি অংশ। সিয়েরা লিওনে রয়েছে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক হারবর। এত প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার পরেও সিয়েরা লিওনের ৭০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমায় বসবাস করে। জনসংখ্যাসিয়েরা লিওনের মোট জনসংখ্যা ৭৩ লক্ষ ৯৬ হাজার ১৯০ জন, যা জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে ১০৩ তম । প্রায় ১৫.৪০% (২০০৪-২০১৪ সালের হিসাব) জনসংখ্যার হার নিয়ে এর প্রতি কিলোমিটার এলাকায় ৭৯.৪০ জন লোক বসবাস করে । গড় আয়ু ৫৭.৩৯ বছর, পুরুষ গড় আয়ু ৫৪.৮৫ বছর এবং মহিলা গড় আয়ু ৬০ বছর । সংস্কৃতিভাষাইংরেজি ভাষা সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা।[১] এখানে আরও প্রায় ২০টি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে মেন্দে ভাষা ও তেমনে ভাষা উল্লেখযোগ্য। প্রায় ১০% লোক ইংরেজি ভাষাভিত্তিক একটি ক্রেওল ভাষা ক্রিও-তে কথা বলেন। এই ক্রেওলটি সিয়েরা লিওনের প্রায় সবার দ্বিতীয় ভাষা। মেন্দা ভাষা দক্ষিণাঞ্চলে, তেমনে ভাষা মধাঞ্চলে এবং ক্রিও ভাষা প্রায় সর্বত্র সার্বজনীন ভাষা বা লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আন্তর্জাতিক কাজকর্মে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। আরও দেখুনতথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
উইকিভ্রমণে সিয়েরা লিওন সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে।
|