রাম মোহন
রাম মোহন (১৯৩১ - ১১ অক্টোবর ২০১৯) ছিলেন একজন ভারতীয় অ্যানিমেটর, টাইটেল ডিজাইনার ও ডিজাইন এডুকেটর। এছাড়াও তিনি ভারতীয় অ্যানিমেশন এর জনক বলেও পরিচিত।[২] খ্যাতনামা এ কার্টুনিস্টের ভারতীয় চলচ্চিত্রের জগতে কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। ১৯৬৮ সালে তিনি চলচ্চিত্র বিভাগ থেকে সরে দাঁড়ান, কাজ শুরু করেন প্রসাদ প্রোডাকশনের অ্যানিমেশন বিভাগের প্রধান হিসেবে। ১৯৭২ সালে নিজের প্রতিষ্ঠান রাম মোহন বায়োগ্রাফিক্স চালু করেন।[৩] ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মুম্বাইভিত্তিক অ্যানিমেশন কোম্পানি গ্রাফিতি মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান এবং প্রধান ক্রিয়েটিভ অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গ্রাফিতি স্কুল অব অ্যানিমেশন।[১] তিনি নন-ফিচার অ্যানিমেশন ফিল্ম বিভাগে দু'বার ১৯৭২ ও ১৯৮৩ সালে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[৪] ২০০৬ সালে তিনি মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আজীবন সম্মাননার পুরস্কার লাভ করেন।[৫] এছাড়াও তিনি ২০১৪ সালে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ভারতের ৪র্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক পদ্ম শ্রী লাভ করেন।[৬][৭] প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষারামমোহন ভারতের মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক সম্পন্ন করে ১৯৫৬ সালে ভারত সরকারের অধীনে মুম্বাইয়ের কার্টুন ফিল্ম ইউনিটে যোগদান করেন। তিনি ইউএস টেকনিক্যাল এইড প্রোগ্রামের অধীনে এনিমেশনের ওপর ওয়াল্ট ডিজনী অ্যানিমেশন স্টুডিওস এর ক্লেয়ার উইকস থেকে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ নেন। তিনি উইকসের কার্টুন ফিল্মস ইউনিটের প্রধান হিসেবে দুবছর দায়িত্ব পালন করেন।[৮] ক্যারিয়ারমোহন ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে চলচ্চিত্র বিভাগে একজন অ্যানিমেটর হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন রাম মোহন বায়োগ্রাফিক্স। এটি ১৯৯৮ সালে ইউটিভি টুন্স এর সাথে একত্রিত হয়ে যায়। ইউটিভি টুন্স হলো ইউনাইটেড স্টুডিওস লিমিটেড ও ইউটিভি ভারতের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।[৯] মোহন মিনু মাসানি বই থেকে নেওয়া একটি চরিত্র ডিজাইনের মধ্যে দিয়ে অ্যানিমেশন চরিত্র তৈরি শুরু করেন। উক্ত চরিত্রটি তৈরি করা হয়েছিল "দিস আওয়ার ইন্ডিয়া" নামক অ্যানিমেশন গল্পের জন্য।[১০] তিনি ১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত কার্টুন ফিল্ম ইউনিট প্রোডাকশনের হয়ে অসংখ্য স্ক্রিপ্ট, ডিজাইন এবং অ্যানিমেশনের কাজ করেছিল। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে "হোমো স্যাপস", যেটি তাকে ১৯৬৭ সালে বেস্ট এক্সপেরিমেন্টাল ফিল্ম বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পেতে সহায়তা করে। ১৯৬৮ সালে তিনি ফিল্ম ডিভিশন ছেড়ে প্রসাদ স্টুডিওস এর প্রধান অ্যানিমেটর হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন নিজের কোম্পানি রাম মোহন বায়োগ্রাফিক্স।[১১] রাম মোহন ছোট ও বড় দৈর্ঘ্যের অনেকগুলো অ্যানিমেশন ছবি ও সিরিজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বি আর চোপড়ার ‘পতি পত্নী আউর ওহ’, সত্যজিৎ রায়ের ‘সাতরঞ্জ কে খিলাড়ি’, মৃণাল সেনের ‘ভুবন সোম’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অ্যানিমেশনের কাজ করেন তিনি।[১০][১২] মীনা কার্টুন তৈরি ও ভূমিকা১৯৯০-এর দশকে উপমহাদেশের মেয়েদের অধিকার সুংসহত করার লক্ষ্য মীনা কার্টুন প্রচারের উদ্যোগ নেয় ইউনিসেফ। সেসময় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি মুখাবয়ব সৃষ্টির জন্য তারা দ্বারস্থ হয় রাম মোহনের কাছে। পরে, তার রং-তুলিতেই ফুটে ওঠে মীনা কার্টুনের সবার পছন্দের রূপটি।[১৩] ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে ‘মীনা’ কার্টুনের ষোলোটি পর্ব পরিচালনা করেন রাম মোহন। এই প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত ছিল ইউনিসেফ ও বাংলাদেশের টুনবাংলা। এই সিরিজের জন্য ১৯৯৬ সালে কমিউনিকেশন আর্টস গিল্ডের দেওয়া হল অব ফেইম অ্যাওয়ার্ডে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।[১২] ফিলিপাইনের ম্যানিলাতে অবস্থিত হান্না-বারবারা স্টুডিওতেও মীনার প্রথম দিককার বেশ কিছু পর্ব নির্মিত হয়। পরে ভারতের রাম মোহন স্টুডিওতে মীনার বাকি পর্বগুলো নির্মাণ করা হয়। সিরিজগুলো পরিচালনা করেছিলেন রাম মোহন নিজেই।[১৩] ‘মীনা’ কার্টুন মূলত বাংলায় নির্মিত টিভি শো। যা ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, নেপালি, পশতু, ফারসি ও পর্তুগিজ ভাষাতেও প্রচার হয়। এর মাধ্যমে অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে রাম মোহনের নাম।[১২] মৃত্যুরাম মোহন ১১ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে ৮৮ বছর বয়সে মুম্বাইয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[১৪] চলচ্চিত্র তালিকা
প্রাপ্ত পুরস্কারসমূহ
গ্রন্থতালিকা
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ |